ঝিনাইদহের মহেশপুরে পারিবারিক কবরস্থানে দৈনিক দেশ রূপান্তরের সম্পাদক অমিত হাবিবকে দাফন করা হয়েছে।
শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর উপজেলার কাজীবেড় গ্রামে খোন্দকার বাড়ির আঙিনায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে বিকেল ৫টায় ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সামনে অমিত হাবিবের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা, ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপুসহ জনসাধারণ। সেখানেও আরেক দফা জানাজা হয়।
শুক্রবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বাংলামটরে দেশ রূপান্তর কার্যালয় প্রাঙ্গণে অমিত হাবিবের প্রথম জানাজা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে হয় দ্বিতীয় জানাজা।
প্রথম জানাজায় রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, কো-চেয়ারম্যান ও দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খান রাতুল, তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান দেশ রূপান্তরের সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ অনেকে অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে রূপায়ণ গ্রুপ ও তার সহকর্মীদের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অমিত হাবিবের দ্বিতীয় জানাজা হয়। এ সময় তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ অন্যরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রেস ক্লাবের জানাজায় অংশ নেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএনপি নেতা ও দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি হাসান হাফিজ, অমিত হাবিবের ভাই ফয়জুল হাবিব রানা, দেশ রূপান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের তার সহকর্মীরা।
জানাজা শেষে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। সেখান থেকে দাফনের জন্য তার মরদেহ ঝিনাইদহে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অমিত হাবিবের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
অমিত হাবিবের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৩ অক্টোবর। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাজির বেড় গ্রামে কেটেছে তার শৈশব। বাবা খন্দকার ওয়াহেদুল হক ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। মা শামসুন্নাহার বকুল গৃহিণী। দুজনেই প্রয়াত।
১৯৮৬ সালে খবর গ্রুপ অফ পাবলিকেশন্সে একই সঙ্গে রিপোর্টার ও সাব-এডিটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অমিত হাবিব।পরে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকায় সাব-এডিটর পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৯১ সালে দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবে যোগ দেন। এর পরের বছর একই পদে যোগ দেন দৈনিক ভোরের কাগজে। অল্পদিনের মধ্যেই পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও পরে বার্তা সম্পাদক হন তিনি।
২০০৩ সালে দৈনিক যায়যায়দিন-এ প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন খ্যাতিমান এই সাংবাদিক। তবে পত্রিকাটি বাজারে আসে ২০০৬ সালে। পাঠকের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পত্রিকাটি তিনি স্বল্প সময়ে ছাড়েন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিরোধে।
২০০৭ সালে চীনের আন্তর্জাতিক বেতারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন তিনি। বাংলা সংবাদপত্রের সঙ্গে তার এই বিচ্ছেদ অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দেশে ফিরে পরের বছরই দৈনিক সমকালে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০০৯ সালে কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি পত্রিকাটিকে বাজারে আনেন। মাঝে ‘সকাল সাতটা’ নামে একটি পত্রিকা বের করার চেষ্টা করেও তিনি সফল হননি। পরে ২০১৩ সালে কালের কণ্ঠে ফিরে উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। সেখান থেকে বেরিয়ে সম্পাদক হিসেবে দৈনিক দেশ রূপান্তরের দায়িত্ব নেন।