জ্বালানি সাশ্রয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে লোডশেডিং করার প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির করুণ চিত্রের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকার দলটির নেই।
লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভের দিন শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী। 'স্বনন' নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আবৃত্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে যান তিনি।
একই দিন দুপুরের আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে বিএনপি। লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ডাকা এই বিক্ষোভে বিএনপির নেতাকর্মীরা হারিকেন হাতে উপস্থিত হন।
জবাবে মন্ত্রী তুলে ধরেন বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুতের কথা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কানসাটে বিদ্যুৎ দাবিকারী কৃষকদের গুলি করেছিল, বিদ্যুৎ না দিয়ে তারেক রহমানের কোম্পানি বিভিন্ন জায়গায় শুধু খাম্বা বসিয়েছিল। তাই বিদ্যুৎ নিয়ে তাদের কথা বলার নৈতিক অধিকারই নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির হারিকেন নিয়ে মিছিলের ডাকে জনগণ এখন শঙ্কিত যে, তাদের হারিকেন থেকে পেট্রলবোমা বের হয় কি না।’
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল নাজুক। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটের বড় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে ব্যর্থতা।
এই পাঁচ বছরে বিএনপি সরকার একটিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারেনি, উল্টো এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কার্যাদেশ বাতিল করেছে। বিদ্যুতের দাবিতে এখানে সেখানে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে সেই সরকার। এমনকি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিও হয়েছে।
বর্তমানে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপি বিক্ষোভ ডাকার পর একে বছরের সেরা কৌতুক আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বাংলা একাডেমিতে আবৃত্তির আয়োজনে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ নিয়ে
তথ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন, কোন পরিস্থিতিতে তারা লোডশেডিং করছেন। বলেন, উন্নত বিশ্বেও জ্বালানি সাশ্রয় করছে, লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে। আর বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন জনপদ নয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্য ১০ গুণ বেড়েছে ও তেলের মূল্য রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ফলে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোও বিদ্যুৎ উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে।
‘জ্বালানি সংকটের কারণে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জনগণকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কায় জাপান এবং ফ্রান্সেও জনগণের প্রতি একই আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে কখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়নি। সেখানেও এর সাশ্রয়ের জন্য বলা হয়েছে এবং অনেক শহরে পানি গরম করার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।
‘অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ও সিডনিতে ২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। আর ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত।’
তিনি বলেন, 'যেসব দেশে এক সেকেন্ডের জন্যও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হতো না, সেসব দেশেও যখন বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও রেশনিং করা হচ্ছে, বাংলাদেশেও সেই ব্যবস্থা নেয়া ও জনগণকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের দেশ তো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়।’
আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন বিদ্যুৎ পেত মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ। এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে এবং গত অর্থবছরে সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫৩ হাজার কোটি টাকা বা ৬ মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের চায়ের আমন্ত্রণ জানানোর পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
‘চা-টা খাওয়ার দাওয়াত নয়, পদত্যাগ করুন’- ফখরুলের এমন মন্তব্যের জবাবে হাছান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার মহানুভবতা দেখিয়ে বলেছিলেন বিএনপির মিছিল-সমাবেশে বাধা না দিতে এবং মিছিল নিয়ে তারা যদি গণভবনেও যায়, তিনি তাদের চা খাওয়াবেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল সাহেবরা যারা প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা বোঝে না, যাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াতের অশোভন জবাব দেয়, যারা দাওয়াতের মর্যাদা বোঝে না, তাদের দাওয়াত দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
চক্রেশ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদাও এ সময় বক্তব্য রাখেন।