সদ্য ঘোষিত বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল্লাহ আল মারজান। তিনি হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ দুই থানায় ৯টি মামলার আসামি।
একজন আসামিকে সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার দায়িত্বশীল ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, বিতর্কিত এই মারজানকে পদ দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না।
দীর্ঘ আট বছর পর গত ২৪ জুলাই বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরে অনুমোদিত আংশিক এ কমটিতে ৩৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে বিতর্কিত মারজানকে ৪ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেয়া হয়।
এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ সংগঠনেই। ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, মারজানকে কেন্দ্র থেকে পদ দেয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে সংগঠন ও নেতাকর্মীরা বিব্রত।
মারজান বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা নাচনাপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হায়দার হোসেনের ছেলে। ২০২০ সালের মার্চে পাথরঘাটার কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা কমিটিতে সহসভাপতি পদ পান তিনি। সর্বশেষ ঘোষিত বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেয়া হয়।
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বাদল জানান, মারজানের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ কর্মী ক্লিনটন মজুমদার টিটু হত্যা মামলাসহ মঠবাড়িয়া থানায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ক্লিনটন হত্যাসহ চারটি মামলা বিচারাধীন। একটির তদন্ত চলছে। তবে সবকটি মামলায়ই জামিনে আছেন তিনি।
চার্জশিটভুক্ত এই আসামিকে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেয়ার পর তার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহত ক্লিনটনের বাবা অরূপ মজুমদার ও মা দিপালী রানী। এ সময় মারজানকে জেলা ছাত্রলীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়াসহ তার ফাঁসির দাবি জানান তারা।
বিতর্কিত এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে পাথরঘাটা থানায়ও ডাকাতি, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে চারটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা থানার ওসি আবুল বাশার।
এর মধ্যে ২০১৫ সালের ২২ জুন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী গ্রামের মো. পান্না মিয়ার বাড়িতে ডাকাতি হয়। ওই ঘটনায় পান্না মিয়া ২৪ জুন পাথরঘাটা থানায় মামলা করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি মারজান।
গত ইউপি নির্বাচনে প্রচারে বাধা দেয়া ও হামলার অভিযোগে ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর পাথরঘাটা থানায় মামলা করেন নৌকার প্রার্থী ফরিদ মিয়া। ওই মামলার এক নম্বর আসামি এই ছাত্রলীগ নেতা। এ ছাড়া লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে চলতি বছর পাথরঘাটা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক হোসনেয়ারা রানী।
এগুলোর মধ্যে পান্না মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির মামলাটি বিচারাধীন, বাকি তিনটি তদন্তাধীন।
এদিকে এসব মামলার কোনো ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে দাবি আবদুল্লাহ আল মারজানের। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, তাই প্রতিটি মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিপক্ষরা আমাকে আসামি করেছে। একটি ঘটনার সঙ্গেও আমার কোনো রকম সম্পৃক্ততা ছিল না। আশা করি, আদালতে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’
কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা হোসনেয়ারা রানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরগুনা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের ছত্রচ্ছায়া ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই মারজান হত্যা, ডাকাতি, লুটপাট, মাদক ব্যবসার মতো অপরাধ করে পার পাচ্ছে। রিমনের তদবিরেই এখন ছাত্রলীগ নেতা হয়েছে।
‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে আমার অনুরোধ, এমন বিতর্কিত কাউকে পদ দিয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না করাটাই বেটার।’
এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে উল্টো হোসনেয়ারা রানীর বিরুদ্ধেই সরকারি জমি দখলের অভিযোগ এনেছেন সংসদ সদস্য হাচানুর রহমান রিমন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মারজানকে আমি পৃষ্ঠপোষকতা করি, এ তথ্য সত্য নয়। যিনি এমন অভিযোগ করেছেন, সেই নারীনেত্রী নিজেই সরকারি জমি দখল করে বাড়ি করেছেন। আমি বাধা দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে এসব বলছেন তিনি।
‘ছাত্রলীগে কে কোন পদ পাবে, এটা তাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে আমার কোনো তদবিরের প্রশ্নই আসে না।’
হত্যাসহ অন্তত ৯টি মামলার আসামি মারজান কীভাবে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেলেন তা ‘বোধগম্য নয়’ বলে জানান জেলা ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন।
তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ আল মারজানকে ইউনিয়ন কমিটিতে নেয়ার বিষয়েই কেন্দ্রীয় নেতাদের মানা ছিল। এখন কীভাবে তিনি জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেয়েছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। হত্যা, ডাকাতি ও মাদক মামলার আসামিকে সংগঠনের পদে দেখে আমি বিব্রত।’
এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রেজাউল কবির রেজা বলেন, ‘নতুন কমিটি কেবল দায়িত্ব নিয়েছে। কমিটির কারও বিরুদ্ধে বিতর্কিত ও সংগঠন পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’