বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না থাকায় সেচযন্ত্র ব্যবহার করে আমন চারা রোপণ করছেন নীলফামারীর কৃষকরা। এতে আবাদে খরচ বেড়েছে। তাছাড়া উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায়ও পড়েছেন তারা।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, চারা রোপণের এখনো সময় রয়েছে অন্তত ১৫ দিন। এ ক্ষেত্রে কৃষকরা দোগোছ পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারেন।
সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদিন হিরু বলেন, ‘এখন বৃষ্টির পানি নেই। যখন বেশি বৃষ্টি হবে তখন নিচু জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকবে, এতে ক্ষতি হয়ে যাবে ধানের। চারা বীজ একটি জমিতে রোপণ করে ৩০ দিনের মত রেখে পরবর্তীতে আরেকটি জমিতে রোপণ করা যায়। এতে বীজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ পদ্ধতিকে দোগোছ পদ্ধতি বলে।’
সরেজমিনে টুপামারী, খোকশাবাড়ি ও ইটাখোলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন চারা রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
কোথাও জমি তৈরি, কোথাও সেচ দেয়া, কোথাও চারা রোপণ আবার কোথাও বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করা হচ্ছে। বৃষ্টির আশায় না থেকে সেচযন্ত্র ব্যবহার করে আমন চাষাবাদে নেমেছেন কৃষকরা।
জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই এলাকার কৃষক জগন্নাথ বর্মণ বলেন, ‘দশ বিঘা জমিতে চারা লাগানোর কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে পাঁচ বিঘা জমিতে চারা লাগানো হয়েছে।
‘বর্ষার এটি ভরা মৌসুম, পানিতে ভরপুর থাকে জমি জায়গা। অথচ আকাশের বৃষ্টি নেই। চারা রোপণ আরও আগে করা দরকার ছিল কারণ এরপর আলু চাষ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় জমি শুকনো অবস্থায় পড়েছিল, বাধ্য হয়ে সেচযন্ত্র ব্যবহার করে সেচ দিতে হচ্ছে জমিতে। বিঘা প্রতি ৬০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত। চলতে থাকবে কিছুদিন।’
একই এলাকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাত বিঘা জমিতে আসনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আর অপেক্ষা করা যায় না বৃষ্টির জন্য। শ্যালো মেশিন ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে চারা রোপণের জন্য। বিদ্যুতের সমস্যা, এই আসে, এই যায়। সে কারণে সেচ দেয়া ব্যাহত হবে, এ কারণে শ্যালো মেশিনে সেচ ব্যবহার করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমনে খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। বিঘা প্রতি দশ হাজারের মত ব্যয় হবে।’
দশ জনের দল নিয়ে চারা রোপণ করছেন আফজাল হোসেন ও আলতাফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আকাশের পানি না থাকায় জমিগুলো পর্যাপ্ত পানি সংকটে ভুগছে। সেচ যন্ত্রের পানি দিয়েও ঘাটতি মনে হয়। এই পানি একদিন পরই শুকিয়ে যাবে। বিঘা প্রতি আমরা এক হাজার করে নিচ্ছি। প্রতিদিন আমরা সাত-আট বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে পারি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, নীলফামারী জেলায় এবার এক লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করেছেন কৃষকরা। জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চারা রোপণ শুরু হয়েছে, যা আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।
পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কলোনীপাড়ার মমিনুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছর ১০ বিঘা জমিতে আমন রোপণ করি। কিন্তু এবার বৃষ্টি নেই, প্রচণ্ড গরম তাই বৈদ্যুতিক মোটরে সেচ দিয়ে আমন রোপণ করতেছি। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমন রোপণ করতে হচ্ছে। এবার আমন চাষে লোকসান গুনতে হবে।’
কৃষক রুবেল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারিনি। জমিগুলো রোদে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আমি এক বিঘা জমি শ্যালো মেশিন দিয়ে চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চারা রোপণে ব্যাঘাত ঘটছে। মূলত আমন চারা রোপণ হয় বৃষ্টির পানিতেই। এখোনো সময় আছে বৃষ্টি হওয়ার। তবে বিকল্প উপায়ে আমন চারা রোপণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষকদের।