স্মারক ডাকটিকিটের মাধমে বরেণ্য ব্যক্তি ও বিশেষ দিনগুলোকে স্মরণীয় করে রাখা হয়। অনেকে বিশেষ দিনের স্মৃতি হিসেবে এই ডাকটিকিট সংগ্রহ করে রাখেন। স্মারক ডাকটিকিট যত পুরোনো হয়, এর দাম তত বাড়ে।
১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই আটটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশে এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর মাধ্যমে তখন আয় হয়েছিল অনেক টাকার রাজস্ব। ডাকটিকিট দিবস হিসেবে এই দিনটিই চলমান আছে।
ডাক অধিদপ্তর জানিয়েছে, যুদ্ধের সময় ও এর পরে ডাকটিকিটের মাধ্যমে এ দেশের স্বীকৃতির বড় একটা জায়গা তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশ নামের একটা দেশের উত্থান হবে বিশ্ববাসীর কাছে জানান দেয়া হয়েছে এই স্মারক ডাকটিকিটের মাধ্যমে। সে সময় বিভিন্ন দেশে চিঠির মাধ্যমে এই স্মারক ডাকটিকিট পাঠানো হয়েছে। ফলে বিশ্ববাসী আমাদের দেশ সম্পর্কে জেনেছেন।
অনেকে বিশেষ দিনের স্মৃতি হিসেবে স্মারক ডাকটিকিট সংগ্রহ করে রাখেন। এমন ডাকটিকিট যত পুরোনো হয়, এর দাম তত বাড়ে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
ডাক অধিদপ্তরের শাখা কর্মকর্তা (ফিলাটেলি) শফিউল আরেফিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই স্মারক ডাকটিকিটগুলোর একটা মূল্য ধরা হয়। ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারির মতো রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুসহ রাষ্ট্রের মহান ব্যক্তিদের অবদান স্মরণীয় করতে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া আমাদের ডাক বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময় স্মারক ডাকটিকিটের প্রদর্শনী হয়। তখন বিভিন্ন দেশে প্রচারের পাশাপাশি বিক্রিও হয়।’
এখন তো চিঠি লেখার চলই উঠে যাচ্ছে। এ সময় কারা এসব ডাকটিকিট কেনে এবং কী উদ্দেশ্যে কেনে – জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অনেকে স্মৃতি হিসেবে ডাকটিকিট সংগ্রহ করে থাকেন। স্মারক ডাকটিকিট চিঠিতে দেয়া হলো কিনা, বিক্রি হলো কিনা, এটা বিষয় না। এর মাধ্যমে একটি দিনকে স্মরণীয় করে রাখা হয়, এটাই বড় বিষয়। ৫০ বছর পরও ওই দিনটিকে স্মরণ করতে পারবেন স্মারক ডাকটিকিটের মাধ্যমে।’
আগে বছরে ১২ থেকে ১৫টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হতো। এখন এর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
ডাকটিকিট দিবসকে ঘিরে ২০০৩-২০০৪ পর্যন্ত ঢালাওভাবে অনুষ্ঠান হলেও গত কয়েক বছর অনুষ্ঠান হয় না বলে জানিয়েছেন ডাক অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
শফিউল আরেফিন বলেন, ‘চিঠি পোস্ট কিংবা যে কোনো পার্সেল পাঠাতে ডাক মাশুল দিতে হয়। স্মারক ডাকটিকিটের মাধ্যমে ওই চিঠি কিংবা পার্সেল বৈধ করা হয়। স্মারক ডাকটিকিটের মূল্য বিভিন্ন রকম হয়। তবে আমরা এখন সব স্মারক ডাকটিকিট ১০ টাকা মূল্যের করছি। টাকার মূল্য ঠিক রেখে স্মারক ডাকটিকিট বিভিন্ন আকারের হয়।’
যুদ্ধের সময় ও এর পরে ডাকটিকিটের মাধ্যমে এ দেশের স্বীকৃতির বড় একটা জায়গা তৈরি হয়েছিল। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন পদ্মা সেতুর ছবি সম্বলিত স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে, যার মূল্য ধরা হয় ১০ টাকা। এই ডাকটিকিটে পদ্মা সেতুর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
শফিউল আরেফিন বলেন, ‘এখন স্মারক ডাকটিকিটের মূল্য ১০ টাকা হলেও যত সময় যাবে, এর দাম তত বাড়তে থাকবে। অনেক পুরাতন স্মারক ডাকটিকিট নিলামেও বিক্রি হয়।’
স্মারক ডাকটিকিট কীভাবে তৈরি হয় জানতে চাইলে শফিউল আরেফিন বলেন, ‘ডিজাইনাররা প্রথমে বিভিন্ন আকৃতির স্মারক ডাকটিকিট ডিজাইন করেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ডিজাইন নির্বাচন করেন। নির্বাচন শেষে গাজীপুরে সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনে তা ছাপা হয়। ফলে স্মারক ডাকটিকিট নকল করার কোনো সুযোগ নেই। চার, পাঁচ, ছয়টা স্মারক ডাকটিকিট মিলে একটা স্যুভেনির সেট হয়। একটি স্যুভেনির সেটের মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা।’
শফিউল আরেফিন বলেন, ‘দেশে পোস্টাল ডিভিশন ২৩টি। সে হিসেবে প্রধান ডাকঘরও ২৩টি। এগুলোয় স্মারক ডাকটিকিট পাওয়া যায়। এ ছাড়া উপজেলা পোস্ট অফিস থেকেও এগুলো সংগ্রহ করা যায়। তাদের কাছে অনেক সময় তা থাকে না। না থাকলে তারা রিকিউজিশন দেন প্রধান ডাকঘরে।’
আগে বছরে ১২ থেকে ১৫টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হতো। এখন এর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
শফিউল আরেফিন বলেন, ‘গত বছর ৩৫টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ হয়েছে। আগের স্মারক ডাকটিকিটে মূল বিষয় লেখা না থাকলেও এখন মূল বিষয় লিখে দেয়া হয়। এ ছাড়া আগের স্মারক ডাকটিকিটে ফুল, পাখি, প্রাণী থাকলেও এখন একটা মূল বিষয়কে কেন্দ্র করে ডাকটিকিট তৈরি করা হয়। যেমন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনে পদ্মা সেতুর ছবি সম্বলিত স্মারক ডাকটিকিট প্রকশ করা হয়।’