চলে গেলেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের সম্পাদক অমিত হাবিব। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
দেশ রূপান্তরের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মামুন নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
২১ জুলাই দেশ রূপান্তর কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অমিত হাবিব। তাৎক্ষণিক তাকে রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। পরে তাকে ওই হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।
বিআরবিতে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরে মঙ্গলবার অমিত হাবিবকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখে জানান, অমিত হাবিব ‘ডিপ কোমায়’ আছেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এ লড়াইয়ে তার জয়লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখানে পর্যবেক্ষণে রাখার এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক ডা. বদরুল আলম মণ্ডল বলেন, ‘উনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মস্তিষ্কে ব্যাপক মাত্রায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে যখন আমাদের হাসপাতালে আনা হয় তখন খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। অধ্যাপক ডা. মালিহা হাকিমের অধীনে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়। আমাদের চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।’
অমিত হাবিব এর আগে ২০২০ সালেও একবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেশকিছু দিন হাসপাতালে ছিলেন।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টা দেশ রূপান্তর কার্যালয়ে অমিত হাবিবের প্রথম নামাজে জানাযা হবে। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাযা শেষে আজই তাকে ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।
ছোট ভাই ফয়জুল হাবিব জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্তে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরে অমিত হাবিবকে সমাহিত করা হবে।
অমিত হাবিবের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৩ অক্টোবর। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কাজির বেড় গ্রামে কেটেছে তার শৈশব। বাবা খন্দকার ওয়াহেদুল হক ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। মা শামসুন্নাহার বকুল গৃহিণী। দুজনেই প্রয়াত। ছোট দুই ভাই ফয়জুল হাবিব রাঙ্গা ও মেহেদী হাসান থাকেন গ্রামের বাড়িতে। ঢাকায় পরিবারের তেমন কেউ নেই। তিনি দুবার বিয়ে করলেও সংসারে স্থায়ী হননি। দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর অনেকটা একাকী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন গুনী এ সাংবাদিক। সংবাদপত্রের বার্তাকক্ষ ছিল তার কাছে সবচেয়ে আপন। সেখান থেকে অসুস্থ হয়েই তিনি চিরবিদায় নিলেন।
যশোর এমএম কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন। তার লেখালেখির শুরুটা তখনই।
১৯৮৬ সালে খবর গ্রুপ অফ পাবলিকেশন্সে একই সঙ্গে রিপোর্টার ও সাব-এডিটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অমিত হাবিব। পরে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকায় সাব-এডিটর পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৯১ সালে দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবে যোগ দেন তিনি। এর পরের বছর একই পদে যোগ দেন দৈনিক ভোরের কাগজে। অল্পদিনের মধ্যেই পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও পরে বার্তা সম্পাদক হন তিনি। ভোরের কাগজর কর্মজীবনে তিনি সবার প্রিয় ‘অমিত দা’ হয়ে ওঠেন। তার নেতৃত্ব ও সংবাদপত্রের অলংকরণ সমাদৃত হয় সব মহলে।
২০০৩ সালে দৈনিক যায়যায়দিন-এ প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন খ্যাতিমান এই সাংবাদিক। তবে পত্রিকাটি বাজারে আসে ২০০৬ সালে। পাঠকের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পত্রিকাটি তিনি স্বল্প সময়ে ছাড়েন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিরোধে।
২০০৭ সালে চীনের আন্তর্জাতিক বেতারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন তিনি। বাংলা সংবাদপত্রের সঙ্গে তার এই বিচ্ছেদ অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দেশে ফিরে পরের বছরই দৈনিক সমকালে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০০৯ সালে কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি পত্রিকাটিকে বাজারে আনেন। মাঝে ‘সকাল সাতটা’ নামে একটি পত্রিকা বের করার চেষ্টা করেও তিনি সফল হননি। পরে ২০১৩ সালে কালের কণ্ঠে ফিরে উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। সেখান থেকে বেরিয়ে সম্পাদক হিসেবে দৈনিক দেশ রূপান্তরের দায়িত্ব নেন।