বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাজার কোটির প্রকল্পের পরও এত ভোগান্তি কেন

  •    
  • ২৮ জুলাই, ২০২২ ১০:৪৪

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘এখন আর আগের মতো জলাবদ্ধতা হয় না। তা ছাড়া পানি জমলেও বৃষ্টি থামলে তা দ্রুত নেমে যায়। ১৭ জুলাইয়ের জলাবদ্ধতা ব্যতিক্রম। এটি হয়েছে বন্যার কারণে। বন্যায় সব ড্রেন ও ছড়া আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে। এ ক্ষেত্রে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। ড্রেনে কিছুতেই ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না।’

সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে এ যাবৎ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ও করা হয়েছে। এরপরও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী।

তাই প্রশ্ন উঠেছে, বিপুল ব্যয় সত্ত্বেও কেন এত ভোগান্তি?

গত ১৭ জুলাই মধ্যরাতে মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা। বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে ঢুকে পড়ে পানি। মাত্র বন্যার ধকল কাটানো নগরবাসীর জন্য এই জলাবদ্ধতা আসে চরম দুর্ভোগ হয়ে। এরপর নগরজুড়ে সবার একই প্রশ্ন- এত প্রকল্প তাহলে কী কাজে এলো?

প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বচ্ছভাবে ঠিকঠাকমতো কাজ হলে সিলেটে জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা না। কিন্তু বিপুল কাজ হলেও এতে যেমন স্বচ্ছতা নেই তেমনি কোনো পরিকল্পনাও নেই। ফলে অর্থ ব্যয় হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু নগরবাসীর দুর্ভোগ লাগব হচ্ছে না।’

৮ থেকে ৯ বছর ধরে নগরের সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে জানিয়ে শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আলাউর রহমান বলেন, ‘নগরের একটি সড়কও ভালো নেই। বছরের পর বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। একবার ড্রেন নির্মাণ করা হয়, এরপর তা ভেঙে আবার নির্মাণ করা হয়, এরপর সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য আবার ভাঙা হয়।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি ভালোর জন্য আমরা এই দুর্ভোগ মেনে নিয়েছি। কিন্তু কোনো ভালো তো হচ্ছেই না, বরং দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। বৃষ্টি এলেই পানি ঘরে ঢুকে পড়ছে।’

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা গেছে, নগরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১১টি ছড়া প্রবাহমান। ছড়ার ১৬টি শাখা ছড়াও আছে। এসব ছড়া-খাল সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ছড়া-খালগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ কিলোমিটার। এর বাইরে নালা-নর্দমা আছে ৯৭০ কিলোমিটার। এতে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার পাকা ড্রেন আছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৯ সালে ছড়া-খাল খনন ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ২০১২ সালে ২৭টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

২০১৩ সালে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছরই জলাবদ্ধতা নিরসনে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে ৭৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে আরও ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। সব মিলিয়ে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, ২০১৯ সালে ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ আসে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।

এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যয় করা হয় ২৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।

এ ছাড়া চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। প্রকল্পটির আওতায় অন্যান্য কাজের সঙ্গে ৩২৭ কিলোমিটার ড্রেন ও ৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে।

ছড়া উদ্ধার ও ড্রেন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাশ বলেন, ‘এই খাতে বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কী কাজ হয়েছে তা প্রকাশ করা দরকার। কেন এতগুলো প্রকল্পের পরও এভাবে পানি জমে যাচ্ছে তা জানা দরকার।’

তবে বাস্তবায়িত প্রকল্পের অনেক সুফল মিলছে দাবি করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘এখন আর আগের মতো জলাবদ্ধতা হয় না। তা ছাড়া পানি জমলেও বৃষ্টি থামলে তা দ্রুত নেমে যায়।’

১৭ জুলাইয়ের জলাবদ্ধতাকে ব্যতিক্রম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি হয়েছে বন্যার কারণে। বন্যায় সব ড্রেন ও ছড়া আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে। আমরা ড্রেন ও ছড়া পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি।

‘এ ক্ষেত্রে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে, ড্রেনে কিছুতেই ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না।’

জলবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় হতাশ সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবাই কথায় কথায় খোঁচা দেন, শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন গেল কোথায় বলেন।

‘আমরা যেসব কাজ করাচ্ছি সেগুলো আমাদের ইচ্ছাতে নয়, সরকারি মহাপরিকল্পনা অনুসারে হচ্ছে। এগুলো মন্ত্রণালয় থেকে ধাপে ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে তারপর অনুমোদন হয়। দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে আমরা টানা ৩ বার সেরা হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, আমরা পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করি। আদতে আমরা যখন পরিকল্পনা করি সেটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাই। কমিশন থেকে মাস্টার প্ল্যান অনুমোদন হলে কাজ শুরু হয়। আমাদের কাজের পরিকল্পনা ‘অপরিকল্পিত’ মনে হলে আমাদের বলতে পারেন। যৌক্তিক মনে হলে আমরা সাদরে গ্রহণ করব।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে সবশেষ প্রকল্প সম্পর্কে মেয়র বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে এক হাজার ২২৮ কোটি টাকা শর্ত সাপেক্ষে বরাদ্দ পেয়েছি। শর্ত হচ্ছে, বরাদ্দের ২০ শতাংশ, অর্থাৎ ২৪৫ কোটি টাকা আমাদেরই পূরণ করতে হবে।

‘বাকি ৯৮৩ কোটি টাকা সরকারের কাছ থেকে চারটি অর্থবছরে পাবে সিলেট সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ২ ধাপের টাকার কাজ চলমান রয়েছে। বাকিটা পর্যায়ক্রমে পাব।’

এ বিভাগের আরো খবর