অর্থনৈতিক ফোরাম ডি-৮ সভাপতি হিসেবে আরও এক বছর দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ। টানা দুই বছর সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে ব্যতিক্রমী রেকর্ড গড়ল।
ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী বুধবারই ডি-৮ এর সভাপতির দায়িত্ব মিসরের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এ বছর মিসরে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ) হতে যাচ্ছে। বিশ্বের ১৯৬টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেবেন। এ জন্য দেশটি ব্যস্ত সময় পার করছে জানিয়ে কায়রো ঢাকাকে আরও এক বছর দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়েছে।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য আনন্দের খবর। কোনো কাঠখড় না পুড়িয়েই আমরা আরও এক বছর ডি-৮ এ সভাপতির দায়িত্ব পালন করব। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ডি-৮ একটি অর্থনৈতিক ফোরাম। ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে আট দেশের আন্তবাণিজ্য ১২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আমি আশা করি আগামী ১০ বছরে এর পরিমাণ ১০ গুণ বাড়বে, যা দাঁড়াবে ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশ সব সময়ই এই ফোরাম থেকে লাভবান হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ অনেক কিছু অর্জন করবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের (বুধবার) সামিটে হালাল মার্কেট নিয়ে কথা না হলেও বাই-লেটারিলি আলোচনা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাই সফরকালেও আমি বিষয়টি তুলে ধরেছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, হালাল মার্কেটের বাজার যারা দখল করে আছে তাদের একটিও মুসলিম দেশ নয়। আমি বিষয়টিতে সবাইকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছি।’
ডি-৮ এর দুই দেশ ইরান ও নাইজেরিয়া যথাক্রমে বিশ্বের পঞ্চম ও ১১তম জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ। দেশে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বুধবারের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে জানান আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘জ্বালানি সংকটে সহযোগিতা বাড়াতে এনার্জি মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একটা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনেকেই এসব নিষেধাজ্ঞা মানছে না। তারা শক্তিশালী দেশ। কিন্তু আমরা দুর্বল। আমরা ইরান থেকে তেল আনব না। তবে ফোরামের মধ্যে সিদ্ধান্ত হলে আমরা ভেবে দেখব কীভাবে কী করা যায়।
ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: নিউজবাংলা
আরও বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ ডি-৮ এর সভাপতি হিসেবে বুধবার হাইব্রিড মাধ্যমে ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডি-৮ সিসিআই-এর চেয়ার বক্তব্য দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভা শুরু হয়। হাইব্রিড মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ সভায় তুরস্ক ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ডি-৮ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দশম শীর্ষ সম্মেলনে ডি-৮ নেতৃবৃন্দ গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভায় পর্যালোচনা করা হয়। সভায় ডি-৮ মহাসচিব আন্ত ডি-৮ সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়াদিতে বিগত বছরে গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
এবারের মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পর্যটন- গুরুত্বপূর্ণ এই ছয়টি খাতে আন্ত ডি-৮ সহযোগিতা বৃদ্ধিসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশ্বব্যাপী চলমান জ্বালানি সংকটের মুহূর্তে জ্বালানি খাতে আন্ত ডি-৮ সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীরা প্রথমবারের মতো জ্বালানিমন্ত্রীদের মিটিং আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডি-৮ প্রতিষ্ঠার সময়ে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার যা বর্তমানে ১২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে মিসর ছাড়া অন্য সাতটি সদস্য রাষ্ট্র ডি-৮ পিটিএ অনুসমর্থন করেছে।
তবে এবারের সভায় মিসর জানিয়েছে, তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডি-৮ পিটিএ অনুসমর্থন করবে।
এ ছাড়া এটা দ্রুত কার্যকর করার লক্ষ্যে ড্রাফট ট্রেড ফাউন্ডেশন স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এবারের সভায় এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয় এবং এই ড্রাফট নিয়ে শিগগিরই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তৃতীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত হবে।
২০২২ সালে ডি-৮ প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। এ সময়টাতেই ডি-৮ এর সদস্যপদ পেতে আজারবাইজান আবেদন করেছে। এবারের সভায় সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে সভায় ডি-৮ এ নতুন সদস্য রাষ্ট্র অন্তর্ভুক্তির নীতিমালা প্রণয়ণের জন্য সদস্য দেশগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে।