ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেয়া সেই নবজাতক সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেকোনো সময় তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নিউজবাংলাকে বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশুটির চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসায় শিশুটি জন্ডিস থেকে সেরে উঠেছে। শ্বাসকষ্ট, বুক ও ডান হাতের ফ্র্যাকচার পুরোপুরি ভালো হয়েছে। ফলে সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।’
শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু বলেন, ‘নাতনিকে হাসপাতাল থেকে আনাসহ নাম রেখে আকিকা দেয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বিকেলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। তার জন্মের পর থেকে জেলা প্রশাসন ও সাংবাদিকরা আমাদের পাশে রয়েছেন। বিভিন্ন বিত্তবান মানুষ আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
এর আগে গত ১৬ জুলাই বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান উপজেলার রায়মনি এলাকার ৪২ বছরের জাহাঙ্গীর আলম, তার ৩২ বছর বয়সী স্ত্রী রত্না বেগম ও তাদের ৬ বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার।
ত্রিশাল থানার এসআই নাজমুল আমিন স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, দ্রুতগতির ট্রাকটি ময়মনসিংহের দিকে আসছিল। বেলা সোয়া ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্ট বিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত আসতেই সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই দম্পতিসহ তাদের কন্যাশিশুকে চাপা দেয় ট্রাকটি। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী নিহত হন। আর মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট চিড়ে বেরিয়ে আসে তার গর্ভে থাকা কন্যাশিশু।
এ সময় স্থানীয়রা নিহত দম্পতির আহত সন্তান সানজিদা ও সদ্যোজাত কন্যাকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সানজিদারও মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশুটির ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে গেলেও সে বেঁচে যায়।
এই ট্রাকই চাপা দিয়েছিল শিশুটির বাবা-মা ও বোনকে
এ ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু অজ্ঞাতদের নামে একটি মামলা করেন। পরে গত ১৮ জুলাই রাতে রাজু আহমেদ শিপন নামে ওই ট্রাকচালককে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পরদিন বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। এ সময় সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারের পর শিপন দাবি করেন- দুর্ঘটনার সময় তার সহকারী ঘুমাচ্ছিলেন। টানা ট্রাক চালানোর কারণে তিনিও ছিলেন ক্লান্ত। আর পেছন থেকে একটি বাসকে সাইড দেয়ার সময় বাঁয়ে চাপাতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
র্যাব কমান্ডার আরও জানান, গত ১১ জুলাই থেকে টানা মালামাল পরিবহন করছিলেন শিপন। এর মধ্যে তিনি একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইলে আনলোড করে আবারও রাজশাহী যান। ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে গাড়ির মালিকের আম বোঝাই করে এবং রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফা আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দিতে রাত ১২টায় রওনা হন।
কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে গত ১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশালে পৌঁছালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে এসে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ সন্তানকে চাপা দেন শিপন।
অভিযুক্ত ট্রাকচালক শিপন
দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তবে সুযোগ বুঝে ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়েন চালক। পরে বাস থেকে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামেন তিনি। সেখান থেকে একটি সিএনজি করে প্রথমে মুক্তাগাছা ও পরে অন্য একটি বাসে করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছান। সেখান থেকে পরিচিত কয়েকজন চালকের ট্রাকে চড়ে তিনি আত্মগোপনে যান।
গ্রেপ্তারের পর গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় চালক শিপনকে ত্রিশাল থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। পরদিন বিকেলে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক ৩ নম্বর আমলি আদালতে তোলে পুলিশ। এ সময় বিচারক মো. তাজুল ইসলাম সোহাগ তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বর্তমানে কারাগারে আছে শিপন।