পরিবহনশ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহনবিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্য ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খান।
সচিবালয়ে বুধবার সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নসংক্রান্ত কমিটির ১১১ দফা সুপারিশমালা বাস্তবায়নে গঠিত টাস্কফোর্সের সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বক্তব্যে শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি নিয়োগপত্র নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে একটা বিরোধ আছে। আমরা এটা আলোচনা করেছি এবং একটি সিদ্ধান্তও নিয়েছি। মালিক-শ্রমিক নেতারা বসে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করবেন এবং কমিটিকে অবহিত করবেন।
‘এখন শ্রমিকরা নিয়োগপত্র পাচ্ছেন না। এখন কেন্দ্রীয়ভাবে মালিক ও শ্রমিকরা এ বিষয়ে বসবেন। আমরা সবাই একমত হয়েছি, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিন ভার্চুয়ালি সারা দেশে একসঙ্গে নিয়োগপত্র দেয়ার বিষয়টি উদ্বোধন করবেন। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগের বাস্তবায়নটা একটু দুর্বল ছিল। এটাকে আমরা এভাবে ত্বরান্বিত করতে চাই।’
টাস্কফোর্সের আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরে শাহাজান খান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ড্রাইভারদের ডোপ টেস্ট করে লাইসেন্স নবায়ন করা বা নতুন লাইসেন্স দেয়ার একটি সিদ্ধান্ত আছে। এই ডোপ টেস্টের বিষয়ে কয়েকটি সেন্টার আছে। আমরা এর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে বলেছি। এই টেস্ট করতে ৯০০ টাকা প্রয়োজন হয়। সেটাকে কমানোর জন্য আমরা অনুরোধ করেছি। এতে যাতে ড্রাইভারদের হয়রানি করা না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
‘আমরা বলেছি বিআরটিএর ৯৩১ জন কর্মীর জনবল কাঠামো রয়েছে। এর মধ্যে ১২২টি পদ এখনও শূন্য আছে। আমরা বলেছি যে, আগামী ৫ মাসের মধ্যে এদের নিয়োগ দিতে হবে এবং সংখ্যা বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজন ৮ হাজারের ওপরে। সেখানে ২ হাজার প্লাস রয়েছে। এটাও যাতে বাড়ানো যায়, আমরা সেই অনুরোধ করেছি।
‘ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা এখন ঢাকা শহরে যা আছে, আমরা মনে করি এটা খুবই সামান্য। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সংখ্যাও আমরা বাড়াতে বলেছি।’
‘চাঁদাবাজি কমেছে’
নানা উদ্যোগের কারণে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ৮০ ভাগ পর্যন্ত কমেছে বলে দাবি করেন শাহজাহান খান। তিনি বলেন, ‘একসময় চাঁদাবাজি মহীরুহের মতো সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য আমাদেরও অনেক অপবাদ শুনতে হয়েছে। সরকারের কাছেও আমাকে অপবাদ শুনতে হয়েছে।
‘আমরা যেটা করেছি, করোনার পরে চাঁদাবাজি একদম বন্ধ করে সার্ভিস চার্জের ব্যবস্থা করেছি। আমরা লক্ষ করছি এতে মালিক-শ্রমিকদের নামে যে চাঁদাবাজি, তার অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। আমার বিশ্বাস, প্রায় ৮০ ভাগ চাঁদাবাজি আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। বাকিটা বন্ধ করার বিষয়ে আজকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আইজি সাহেবসহ মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা সেভাবে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘…নতুন করে একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা যারা সড়ক মহাসড়ক থেকে টোলের নামে টাকা নিচ্ছে। অথচ ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারে বলা হয়েছে, সড়ক, মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করা যাবে না; শুধু টার্মিনাল থেকে টোল নিতে পারবে।
‘এ বিষয়ে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগকে পত্র নিয়ে অবিলম্বে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যে চাঁদা আদায় হচ্ছে টোলের নামে, তা বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
অবৈধ ড্রাইভিং স্কুল বন্ধ করে মানসম্মত স্কুলগুলোকে অনুমতি দিতে বিআরটিএকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান শাহজাহান খান।
হাইওয়ের পাশে কোনো হাট ইজারা না দিতেও স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাসের প্রতিযোগিতা বন্ধের নির্দেশ
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলোর মধ্যে গতি প্রতিযোগিতা বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে টাস্কফোর্স।
শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা আজকেও বিষয়টি আলোচনা করেছি এবং এটায় খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অনেক সময় আমাদের শ্রমিকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। শ্রমিকরা মালিকদের কাছ থেকে বাস ইজারা নেয়। এ অবস্থা আমরা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছি। এটা ক্ষতিকর।
‘আমরা নির্দেশ দিচ্ছি, যাতে কোনোক্রমেই একটি বাস আরেকটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে। গাড়ি রেখে রাস্তা আটকে রাখা- এসব বিষয়ে আমরা একটা সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা কর্মরত ৬২ হাজার পরিবহন শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আরও পরিবহন শ্রমিককে আমরা প্রশিক্ষণ করাব টার্মিনালগুলোতে।’
যেখানে-সেখানে বাস-ট্রাক পার্কিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আরও কয়েকটি বাস টার্মিনাল করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সেগুলো হলে আর সড়কে পার্কিং করা যাবে না। আর পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি শুধু পুলিশ জব্দ করবে না। সেগুলো স্ক্র্যাপ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’