বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য

  •    
  • ২৭ জুলাই, ২০২২ ১১:১১

টঙ্গী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হযরত আলী মিলন বলেন, ‘ওই ছাত্রের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল কি না সেটি বলা যাচ্ছে না। লাশ পঁচে ফুলে গেছে। শরীরের কিছু কিছু জায়গায় চামড়া উঠে গেছে। তাই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।’

বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোয়াজের বিন আলমের সঙ্গে এক ছাত্রীর প্রণয়ের সম্পর্ক ও সম্প্রতি তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে- পুলিশ এমন কথা বললেও তার পরিবার ও ওই ছাত্রীর বক্তব্য ভিন্ন।

মোয়াজেরের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়, ওই ছাত্রী শুধুই তার বন্ধু ছিলেন, এর বাইরে অন্য কোনো সম্পর্কের বিষয়ে তারা জানেন না।

ওই ছাত্রীর দাবি, তাকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন মোয়াজের তবে তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর থেকে তাকে উত্তক্ত্য করে আসছিলেন মোয়াজের।

মোয়াজের বিন আলমের মামা নাসির মজুমদার নিউজবাংলাকে জানান, মেধাবী ছাত্র মোয়াজেরের স্কলারশিপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া করছিল। ছাত্র অবস্থাতেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম চাকরি করত সে। পড়া আর চাকরি নিয়ে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করত। শান্ত স্বভাবের মোয়াজেরের নিখোঁজের আগে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন বা বিষন্নতাও দেখতে পায়নি তার পরিবারের সদস্যরা।

নাসির মজুমদার বলেন, ‘আমার ভাগিনা দিনে ভার্সিটিতে ক্লাস করত আর সন্ধ্যায় অফিস করত। নিখোঁজের দিন সে সকালেও ভার্সিটিতে যায়। ফিরতে দেরি হওয়ায় সন্ধ্যায় তার মা তাকে ফোন করলে জানায় সে তার বন্ধু সৌরভের সঙ্গে পঞ্চগড় বেড়াতে যাচ্ছে।

‘হঠাৎ না জানিয়ে এভাবে পঞগড় কেন যাচ্ছে জানতে চাইলে সে তার মাকে এমনি যাওয়ার কথা জানায়। পরদিন তার মা আবার ফোন করলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা সেটি রিভিস করেন। এরপর মোয়াজেরের নিখোঁজের বিষয়টি সামনে আসে। তার বন্ধু সৌরভের বাসায় গিয়ে জানা যায়, মোয়াজেরের পঞ্চগড় যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।’

মোয়াজেরের প্রেম সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ছিল কিনা জানতে চাইলে নাসির মজুমদার বলেন, ‘ওর প্রেমের কোনো ঘটনা আমরা জানি না। তবে ওর একজন বান্ধবী ছিল যার সঙ্গে যোগাযোগ হত, তবে সেটি স্বাভাবিক বন্ধুত্ব। এটাও আমি জেনেছি দুর্ঘটনার পর।’

মোয়াজেরের পরিবার যে বান্ধবীর কথা নিউজবাংলাকে জানিয়েছে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী। তারা সহপাঠী। ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। কিন্তু তিনি দেন ভিন্ন তথ্য।

তার ভাষ্যমতে, মোয়াজের তাকে বিরক্ত করতেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু একই ভার্সিটিতে পড়ি তাই তার সঙ্গে আমার এমনিতেই জানাশোনা ছিল। কিন্তু সম্পর্কতো দূরের কথা আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বও ছিল না। এক মাস আগে মোয়াজের আমাকে প্রপোজ করে কিন্তু আমি সেটা ফিরিয়ে দেই। এরপর থেকে ও আমাকে বিরক্ত করা শুরু করে।

‘আমাকে ফোন করে উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকে। ওর সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাপ দিতে থাকে। ওর নম্বর থেকে ফোন ধরা বন্ধ করে দিলে অন্য নম্বর থেকে আমাকে ফোন দিয়ে যায়।’

ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘পরিচিতদের কাছে আমার নামে আজেবাজে কথা বলে। এমনকি রাতে আমার বাসার নিচে এসে চিৎকার চেঁচামেচিও করত। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত ছিলাম। ওর ফ্যামিলিকেও বিষয়গুলো জানানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু বাসার যে নম্বর আমি ম্যানেজ করেছিলাম সেটিতে কল দিলে কেউ ফোন ধরত না।

‘নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন শেষ ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। ও কোন এক বাসার কেয়ারটেকারের নম্বর থেকে আমাকে ফোন করেছিল আমি ওর কথা শুনে রাগ করে ফোন রেখে দিয়েছিলাম। পরে শুনেছি ও মিসিং।’

বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরু খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার সকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে একজন অজ্ঞাত অটোরিকশাচালক জানান, ইসলামপুর ভাঙ্গা ব্রিজ এলাকায় নদীর পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় কিছু জামা-কাপড়, মোবাইল ফোন ও জুতা পড়ে আছে। পরে বাসন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মোবাইল ফোন থেকে সিম বের করে নিখোঁজ ছাত্রের মায়ের নম্বরে ফোন করে।

ওসি আরও জানান, মুঠোফোনে ওই ছাত্রের মা জানান, শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে তার ছেলে মোয়াজের বিন আলম বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। সবশেষ ওই ছাত্র তার মাকে জানায় সে পঞ্চগড় বেড়াতে যাচ্ছে।

পরে বাসন থানা পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে নিখোঁজ ছাত্রের বাবা ও মামা বাসন থানা পুলিশকে নিয়ে তুরাগ নদীতে খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন সোমবার সকালে গাছা থানার পলাশোনা গোদারাঘাট এলাকার তুরাগ নদীর তীর থেকে একটি ভাসমান মরদেহ পাওয়া যায়। ওই মরদেহটি নিখোঁজ ছাত্র মোয়াজের বিন আলমের বলে শনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা।

ওসি মালেক খসরু আরও বলেন, ‘মোয়াজেরের মা জানান তার ছেলের সঙ্গে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাদের সম্পর্ক ছিন্ন (ব্রেকআপ) হয়। এরপর থেকেই মোয়াজের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল।’

তিনি বলেন, ‘শনিবার রাত আনুমানিক ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয়রা এক যুবককে ইসলামপুর ভাঙ্গা ব্রিজ এলাকায় এলোমেলো ঘুরাফেরা করতে দেখে। এ সময় ছেলেটির শরীর ও জামা-কাপড় ঘামে ভেজা ছিল। তাকে বেশ চিন্তিত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দেখা গিয়েছিল। স্থানীয়রা তাকে ঘোরাফেরার কারণ জিজ্ঞেস করলে, সে ওই এলাকায় ঘুরতে এসেছে বলে জানায়।

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী টঙ্গী নৌ-পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ছাত্রের শরীরের চামড়া পঁচে ফুলে গেছে। এ কারণে আঘাতের কোনো চিহ্ন বোঝা যায়নি। আমরা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রের পরিবার ময়নাতদন্তছাড়াই মরদেহ নিয়ে যেতে অনেক চেষ্টা করেছে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আমার বাকবিতন্ডাও হয়। যেহেতু মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট না, তাই আমরা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। রিপোর্টে আলামত পাওয়া গেলে হত্যা মামলা হিসেবে মামলার তদন্ত হবে।’

গাছা থানায় নিহতের বাবা রেজাউল আলম হিরো একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। ওই মামলাটি তদন্ত করছে নৌ-পুলিশের এসআই আফজাল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রের পরণে শুধু প্যান্ট ও কালো বেল্ট ছিল। আগের দিন রোববার বাসন থানার ইসলামপুর ভাঙ্গা ব্রিজ এলাকায় তার পরনের শার্ট, আইডি কার্ড, মোবাইল ও জুতা পাওয়া যায়। এরপর থেকেই তার আত্মীয় স্বজন তুরাগ নদী ও আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।

‘সোমবার দুপুর ১২টার দিকে গাছা থানা পুলিশ নৌ-পুলিশকে একটি মরদেহ ভেসে থাকার তথ্য জানায়। পরে নৌ-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।’

টঙ্গী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) হযরত আলী মিলন জানান, ওই ছাত্রের শরীরে তারা কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি। তবে লাশ পঁচে ফুলে গেছে। শরীরের কিছু কিছু জায়গায় চামড়া উঠে গেছে। তাই আঘাতের চিহ্ন কিনা সেটা বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।’

এ বিভাগের আরো খবর