বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৫২ বছর পর বধূবরণ

  •    
  • ২৬ জুলাই, ২০২২ ২০:৫০

পেশায় শিক্ষক গীতা স্বামী, কন্যা, সংসার আর চাকরি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন বছরের পর বছর। তাই ইচ্ছা থাকলেও কখনও বাংলাদেশে স্বামীর ভিটেয় পা পড়েনি তার।

এ যেন সিনেমার গল্প। ৫২ বছর পর স্বামীর বাড়িতে এলেন বউ। আর সেই বউকে ধান-দূর্বা, ধর্মীয় রীতিনীতি আর উৎসবের আমেজে বরণ করে নিলেন স্বজনরা। ঐতিহ্যর রসমালাই দিয়ে হলো মিষ্টিমুখও।

গত ২৩ জুলাই এমনই বিরল ঘটনার সাক্ষী হলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার খেয়াস গ্রামের মানুষেরা।

বধূটির নাম গীতা রানী সরকার। দেশ ভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে ভারতের আগরতলায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে সেখানে বসবাস করা সুভাষ দাশের সঙ্গে বিয়ে হয় তার।

সদর দক্ষিণ উপজেলার খেয়াস গ্রামেরই ছেলে ছিলেন প্রয়াত সুভাষ দাশ। দেশ ভাগের সময় তিনিও ভারতে চলে গিয়েছিলেন।

গীতা রানীর বাবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার চুনটা গ্রামে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও ভারতের আগরতলায় গিয়ে এমএ ডিগ্রি নেন। জড়িত হন শিক্ষকতা পেশায়।

৫২ বছর আগে ২৪ বছর বয়সে সুভাষ দাশের সঙ্গে গীতার বিয়ে হয়। আগরতলাতেই তারা দাম্পত্য জীবন শুরু করেছিলেন। একে একে দুই কন্যা সন্তানও হয় তাদের।

পেশায় শিক্ষক গীতা স্বামী, কন্যা, সংসার আর চাকরি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন বছরের পর বছর। তাই ইচ্ছা থাকলেও কখনও বাংলাদেশে স্বামীর ভিটেয় পা পড়েনি তার।

এবার জীবন সায়াহ্নে এসে স্বামীর বাড়ি আর স্বজনদের জন্য মন কেঁদে উঠল তার। তাই গত ২৩ জুলাই ছোট মেয়ে শ্রীমতী শংকরী দাশকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন গীতা রানী সরকার। মেয়ে শংকরী দাশ ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই জেলার জেলা ও দায়রা জজ এখন।

৫২ বছর পর স্বামীর পৈতৃক বাড়িতে কন্যাসহ গীতা রানীকে উৎসবের আমেজে বরণ করে নেন স্বজনরা। পরদিন মা-মেয়ে ঘুরে দেখেন তাদের গ্রাম। কথা বলেন গ্রামের মানুষ, সুভাষ দাশের বন্ধুদের স্বজন, জনপ্রতিনিধি আর কৌতূহলী মানুষের সঙ্গে।

গীতা বলেন, ‘স্বামী, সন্তান আর চাকরি নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। তাই কখনও ঘুরে যেতে পারিনি স্বামীর ভিটায়। আজ আমার স্বামী নেই। তবে এই বয়সে এসে বারবার মনে হতে লাগল- আমি বাংলাদেশে ফিরে যাই। স্বজনদের সঙ্গে দেখা করি। মনটা হালকা হবে। তাই মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছি।’

চোখের পানি মুছে গীতা আরও বলেন, ‘শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে যে আদর করল, যেভাবে বরণ করল, তাতে আমার এ জীবন সার্থক।’

এ সময় দেশভাগ থেকে শুরু করে, স্বামী সংসার নিয়ে দীর্ঘ স্মৃতিচারণা করেন গীতা। উপস্থিত সবাই তার স্মৃতিচারণা মন দিয়ে শোনেন।

গীতা রানীর মেয়ে শংকরী দাশ বলেন, ‘বাবার বাড়ি এসেছি। খুব ভালো লাগছে। আসলে নিজের বাড়ি আসলে যে অনুভূতি হয় তা বলে প্রকাশ করা যাবে না।’

সবার উদ্দেশে এ সময় শংকরী দাশ বলেন, ‘আপনারা আগরতলায় আমার বাড়িতে যাবেন।’

বুধবার মা-মেয়ে ফিরে যাবেন ভারতে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘সেদিন আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম, একজন বধূকে কীভাবে আপনজনেরা বরণ করে নেন। স্বামীর ভিটায় এসে স্বজনদের এমন আয়োজন দেখে আনন্দে আপ্লুত হয়ে যান গীতা রানী সরকার। বিষয়টা আমার কাছেও খুব ভালো লেগেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর