‘উচ্চ হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে চলে গিয়েছে, নিকৃষ্ট হিন্দু রয়ে গিয়েছে এখানে।’ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহম্মেদের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে জেলাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।২৩ জুলাই বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ সদরে সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন সাহাব আহম্মেদ। সেই বক্তব্যের ৩০ সেকেন্ড সোমবার ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে নিউজবাংলার কাছে সাহাব আহম্মেদের ওই বক্তব্যের ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ এসেছে।
এতে সাহাব আহম্মেদকে বলতে শোনা যায় (বাক্যরীতি অপরিবর্তিত), ‘আমি সাহাব আহম্মেদ। আমার বাবা মহিউদ্দিন আহম্মেদ আপনাদের এমপি ছিলেন। একজন এমপির বাংলা অর্থ হচ্ছে জাতীয় সংসদ সদস্য। জাতীয় সংসদের কাজ হচ্ছে দেশের সংবিধান প্রণয়ন করা, দেশের আইন প্রণয়ন করা। একজন সংসদ সদস্য (পঙ্কজ দেবনাথ) যখন আরেকজন জনপ্রতিনিধিকে বলেন, তাকে রামদা দিয়ে কোপাবেন, ওই মুহূর্তে তার সংসদ সদস্য পদে থাকার কোনো অধিকার নাই।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা জিনিস জানেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে বাংলাদেশে স্বাধীনতার আগে একসময় অনেক হিন্দু ছিল অর্থাৎ সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিল। এখানে যারা উচ্চ সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন তারা সব কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে চলে গিয়েছে, আর যত নিকৃষ্টগুলা এখানে থেকে গেছেন।
‘দেখেন বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাইয়া জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সবাই ওনাকে চেনে, সবাই ওনাকে সম্মান করে। জ্যোতি বসুর মতো লোকরা বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছে, আর পঙ্কজ দেবনাথের মতো কীটগুলা বাংলাদেশে থেকে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মেহেন্দিগঞ্জটা শান্তির জনপদ, সেই মেহেন্দিগঞ্জকে এরা বারবার রক্তাক্ত করছে। তার (পঙ্কজ দেবনাথ) রক্তের নেশা হয়ে গেছে। সে হত্যা করতেছে, লোকজনকে আহত করতেছে। আবার হুমকি দিচ্ছে, কামাল খানের মতো জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিকে রামদা দিয়ে কোপাবে। আসলে ভাই এই নিকৃষ্ট পঙ্কজ দেবনাথের হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহম্মেদের ছেলে ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদের ভাই সাহাব আহম্মেদ।
ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে তাকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ধরেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে এ বিষয়ে বরিশাল-৪ (হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘সাহাব আহম্মেদ যে সাম্প্রদায়িক একটা লোক সেটা তো সবাই জানে। আপনারা তো শুধু ওনার বক্তব্য শুনেছেন। কিন্তু ওনার আরও অপকর্ম রয়েছে। সাহাব আহম্মেদ বরিশাল নগরীর আলেকান্দা এলাকায় নির্যাতন করে অতুল মুখার্জীর মামাবাড়ির জমি দখল করেছেন। নির্যাতন সইতে না পেরে ওই হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যায়। এর পাশেই এক খ্রিষ্টান নারীকে হত্যা করে তার জমিও দখল করেন সাহাব আহম্মেদ।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু বলেন, ‘একজন আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে আমরা এই ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই আশা করি না। আমরা মনে করছি, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশ ত্যাগ করার পেছনে সাহাব আহম্মেদের ইন্ধন রয়েছে। উনি সাম্প্রদায়িকতাকে যে লালন করেন তা ওনার বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে।’
সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক তৌহিদুজ্জামানের কল রেকর্ড ফাঁস হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ওই কল রেকর্ডে মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কামাল উদ্দিন খানকে কোপানোর কথা বলেন এমপি পঙ্কজ। এর প্রতিবাদে ২৩ জুলাই মেহেন্দিগঞ্জে পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। সেই সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহম্মেদ।