যশোরের চৌগাছা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের বিপ্লব হোসেনের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, বরং তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
মঙ্গলবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করা হয়।
নিহতের স্ত্রী নাসরিন আক্তার দাবি করেছেন, বিপ্লবকে খুন করে সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রচার করে তার চাচাতো দুই ভাই ও হত্যাকাণ্ডের সহযোগিরা। তারাই মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই বিপ্লবের মরদেহ দাফন করে। পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও এলাকার মানুষের আলোচনায় হত্যার বিষয়টি সামনে এসেছে।
হত্যার অভিযোগ এনে গত ১৬ মে যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলাও করেছেন নাসরিন আক্তার। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আসামিরা হলেন- চৌগাছা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আরশাদ আলীসহ তার দুই ছেলে আরিফ ও আলামিন, একই গ্রামের রমজান মালিথার ছেলে আরিফুল ইসলাম, নিয়ামতপুর গ্রামের বুদো’র ছেলে বিপুল হোসেন।
মামলা করায় আসামিরা নাসরিন ও তার সন্তানদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
লিখিত বক্তব্যে নাসরিন জানান, বাড়িতে একটি কুকুরের বাচ্চা আসা নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আসামিদের সঙ্গে বিপ্লব হোসেনের বিরোধ হয়। এ সময় তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
হাতাহাতির পরদিন ১ মার্চ সন্ধ্যায় বিপ্লব হোসেন মোটরসাইকেলে চড়ে তার খালু শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। পরে মুক্তদহ গ্রামের মোড়ে (চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়ক) পৌঁছালে আসামিরা তার গতিরোধ করে এবং তাকে মারধর করে গুরুতর জখম করে।
আশপাশের মানুষ বিপ্লবকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় আসামিরা সড়ক দুর্ঘটনার খবর প্রচার ও প্রভাব বিস্তার করে নিহতের পরিবারকে থানায় অভিযোগ দেয়া থেকে বিরত রাখেন।
নাসরিন বলেন, ‘আমার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্ত করতে দেয়া হয়নি। তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন হয়ে যায়। পরে খোঁজখবর নিয়ে ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আমি গত ১৬ মে আদালতে মামলা করেছি।’
নাসরিন জানান, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে গত ৩১ মে যশোর পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সেদিন রাত তখন পৌনে ৮টা। চৌগাছা থেকে তারা দুজন মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন। এ সময় মুক্তদহ মোড়ে তারা দেখেন, রক্তাক্ত একজনকে রাস্তার পাশে ঝোঁপের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েক ব্যক্তি।
পরে তারা জিজ্ঞেস করলে ওই ব্যক্তিরা বলেন, ‘করিমনের (ইঞ্জিনচালিত যান) সঙ্গে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।’
কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে রক্তাক্ত ব্যক্তিকে কেন ঝোঁপের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে- ওই ব্যক্তিরা কোনো সদুত্তর না দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ অবস্থায় পথচারী আরেকজনের সহায়তায় রক্তাক্ত বিপ্লবকে একটি ইজিবাইকে তুলে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা দুজন। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক বিপ্লবকে মৃত ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় বিপ্লবের স্বজনদের ফোন করে খবরটি দেয়া হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে বেশ কয়েকজন এসে হাজির হন এবং উদ্ধারকারীদের বলেন, ‘বিপ্লব আমাদের ভাই। সমস্যা নেই, আপনারা চলে যান।’
কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা দুজন দেখতে পান- যারা তাদের হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বলছেন, তারা সেই ব্যক্তি- যারা রক্তাক্ত বিপ্লবকে হাসপাতালে না নিয়ে ঝোঁপের দিকে টেনে নিচ্ছিলেন।
অীভযোগের বিষয়ে পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। ভিকটিমের মরদেহ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে নিহত বিপ্লবের স্ত্রী নাসরিন আক্তার ছাড়াও মা সাবিরন বেগম, ভাই রুবেল হোসেন, মেয়ে সাবিনা আক্তার বিপাশা, খালু শ্বশুর রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।