পদ্মা সেতু কেবল দুই পাড়কে এক করার সেতু নয়, এটা দেশের আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতা গড়ারও সেতু বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ‘আমাদের টাকায় আমাদের পদ্মা সেতু’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চন্দ্রাবতী একাডেমি প্রকাশিত বইটিতে শিক্ষাবিদ, সংবাদকর্মী, প্রকৌশলী বিশেষজ্ঞ ও নির্মাণসংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট লেখকদের ৬৭টি লেখা, গুরুত্বপূর্ণ ছবি, তথ্য-উপাত্ত স্থান পেয়েছে। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা ও মূল রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এই সেতু তৈরি করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তা অজানাই রয়েছে। এ জন্য জাতীয় সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হয় এবং জাতীয় সংসদ ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানানো হয়।
‘বড় উদ্যোগে এ ধরনের প্রকাশনা সব সময় প্রয়োজন আছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণের পেছনের গল্পগুলো সবারই জানা উচিত। কী কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়েছেন, এগুলো জানতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পাদিত বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী ও নাম ঠিক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘সেতুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তা কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তাই এ কথা আজ প্রমাণিত যে, করাপশন সম্পর্কে ঢালাই অভিযোগ আসলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
‘তারা মানিলন্ডারিংয়ের কথা বলে, বলে সুইসব্যাংকে টাকা পাচার করেছে। আমরা বললাম কারা পাচার করেছে তথ্য দিল না। তারা বলে প্রাইভেট সেক্টরের তথ্য দেয়া যাবে না। তারা আসলে মানিলন্ডারদের সাপোর্ট করে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা কিছু বললেই লাফালাফি করার সুযোগ নেই। যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, মামলা খেয়েছিলেন, দুর্নামের ভাগিদার হয়েছিলেন, তাদের পুরস্কৃত করা উচিত। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত। যারা অভিযোগ তুলেছিলেন তাদেরই এই ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।
‘পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব, আত্মপ্রত্যয়ের প্রতীক। তাই বিদেশিরা কিছু বললেই লাফালাফির কিছু নাই। বিদেশিদের সব পরামর্শ গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। এই শিক্ষা আমরা পদ্মা সেতু থেকে শিখেছি। পদ্মা সেতু সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়ে চলছে।’
অনুষ্ঠানে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক নিজেরাই অভিযোগ তুলে তা তদন্ত করতে চেয়েছিল। আমি তা নাকচ করে বলি এটা একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ। এখানকার নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থা আছে। এরপর তারা তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করতে চাইল। আমি সেটাও নাকচ করি। তারা ওকাম্পোর নেতৃত্বে প্যানেল করল।
‘প্যানেল সরাসরি বলে, তোমরা সৈয়দ আবুল হোসেনকে আসামি করোনি কেন? তাকে আসামি করে রিমান্ডে নাও।’
তিনি বলেন, ‘যারা হতাশার কথা বলত, তারা তাদের জবাব পেয়ে গেছে। আমরা নিজেরা যে কিছু করতে পারি, পদ্মা সেতু তারই প্রমাণ। স্বাধীনতা অর্জনের পর পদ্মা সেতু বড় ধরনের একটি মাইলফলক। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের চলে যাওয়া সঠিক ছিল না।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে রাজনীতি এত বেশি প্রবল ছিল যে টেকনিক্যাল জটিলতার কথা কেউ দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি। দেশি বিশেষজ্ঞরা সবকিছু সামলেছেন। এই সেতু নিয়ে এই আলোচনা বহুদিন জারি থাকবে।’
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সবচেয়ে দুরূহ কাজটি সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। সে সময় একজন লোকও ছিল না, যারা পদ্মা সেতুকে লাভজনক বলেছে। তারা সঠিক ছিল না। সবাই বুঝে বিরোধিতা করেনি, শুধু এগিয়েছে ধারণার ওপর।
‘কোনো ধরনের আপস করা হয়নি। ১৩-১৪টা বিষয়ে পিএইচডি করার মতো বিষয় পদ্মা সেতুতে বিকশিত হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞ বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘ধার করা অর্থে টেকসই উন্নয়ন হয় না। নিজস্ব অর্থায়নে, নিজেদের জ্ঞান ও বুদ্ধির বদৌলতে এ দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’