মামি-ভাগনের মধ্যে গড়ে ওঠে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক। টানাপোড়েন তৈরি হয় মামির সংসারে। পরিবারের সদস্যরা জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন ভাগনেকে। কিন্তু এখানে থেমে যায়নি সব। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের পালকে যোগ হয় নতুন রং। সেই রং ভাগনের সংসারেও নিয়ে আসে বিষাদের ছায়া।
এই পর্যায়ে নতুন দিকে মোড় নেয় এই গল্প। নিজেকে অপরাধী ভেবে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন ভাগনে। মামির রক্তে নিজের হাত রাঙিয়ে ভাগনে নিজেকে তুলে দেন পুলিশের হাতে। কাঠগড়ায় নির্দ্বিধায় নিজেকে স্বীকার করে নেন খুনি হিসেবে। বর্ণনায় দেন হত্যার আদ্যোপান্ত।
ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার। গলা কেটে হত্যা মামলায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তরিকুল ইসলাম সোমবার সকালে কিশোরগঞ্জ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শহরের হারুয়া গুরুদয়াল সরকারি কলেজ রোড এলাকায় নিজ বাসায় শনিবার বেলা পৌনে ২টার দিকে খুন হন গৃহবধূ রোকসানা। এ ঘটনায় রাতে তার স্বামী মো. তাইজুল অভিযুক্ত ভাগনে মামুন মিয়াকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন।
রোকসানা-তাইজুল দম্পতির ঘরে তিন ছেলেমেয়ে আছে। আসামি মামুন পৌর শহরের শোলাকিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তার ঘরেও আছে সন্তান। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি বাস করতেন হারুয়া এলাকায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, ২০০৫ সালে শহরের হারুয়া এলাকার তাইজুলের সঙ্গে বিয়ে হয় রোকসানার। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই রোকসানার সঙ্গে তাইজুলের ভাগনে মামুনের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এর পর থেকেই তাইজুল-রোকসানার পরিবারে কলহের শুরু হয়। মামুন ও রোকসানার সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে মামুনের পরিবার তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। মামুনের ঘরে জন্ম নেয় এক সন্তান।
এরপরও মামুন ও রোকসানার সম্পর্কে ভাটা পড়েনি। বিষয়টি জেনে মামুনের স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যান। অন্যদিকে মামুন ও রোকসানার সম্পর্কেরও অবনতি হয়। এ সম্পর্ক থেকে মামুন সরে যেতে চাইলেও রোকসানা তা চাননি। তাই মামুন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাশেদুল আমিনের আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মামুন। হত্যার কথা স্বীকার করে মামুন বলেন, ‘এ অবৈধ সম্পর্ক আমি শেষ করতে চেয়েছি কিন্তু মামির (রোকসানা) জন্য পারিনি। আমি অনেক পাপ করেছি, তাই মামিকে হত্যা করে সেই পাপ শেষ করে ফেললাম।’
তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘জবানবন্দি শেষে ওইদিন বিকেলেই মামুনকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামুনের জবানবন্দির কারণেই দ্রুত অভিযোগপত্র দেয়া সম্ভব হয়েছে।’
এজাহারে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে মামুন ও তাইজুলের পরিবারের মধ্যে কলহ চলে আসছিল। গত শনিবার দুপুরে রোকসানা রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় মামুন তাদের ঘরে ঢুকে রোকসানার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রোকসানাকে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন মামুন।
স্থানীয় ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামুন রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। রোকসানার সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি সবাই জানত। এ নিয়ে তাইজুল-রোকসানার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। শনিবার দুপুরে নামাজের পর শুনি মামুন রোকসানাকে হত্যা করেছেন। হত্যার পর তিনি মরদেহের পাশেই বসেছিলেন। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে।
রোকসানার স্বামী তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘মামুনের সঙ্গে রোকসানার সম্পর্ক নিয়ে বেশ কয়েকবার আমি তাদের নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা কেউ আমার কথা শুনত না। আমার ৮ বছর বয়সী মেয়ে জানিয়েছে, কিছুদিন আগেও তার নানার বাড়িতে মামুন গিয়েছিল। সেখানেও তার মায়ের সঙ্গে মামুনের কথা-কাটাকাটি হয়। ওইদিনও মামুন তার মায়ের মাথায় কাঠ দিয়ে আঘাত করে।’
কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আমিন বলেন, ‘রোকসানার সঙ্গে মামুনের সম্পর্কের কারণে তার পরিবারের টানাপোড়েনের কথা উঠে এসেছে৷ মামুন পরিকল্পিতভাবে রোকসানাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন বলে তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷’