সংবাদ প্রকাশের জেরে সংবাদকর্মীদের হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়েও বেফাঁস মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
রোববার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের হুমকি ও বেফাঁস মন্তব্যটি করেন ইলিয়াস। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদও তার পাশে ছিলেন।
সংবাদকর্মীদের অভিযোগ, হুমকির ধারাবাহিকতায় সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও দৈনিক সংবাদ প্রকাশের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আরফান সাঈদকে বের করে দেয়া হয়।
দৈনিক আজকের পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সাজ্জাদ বাসার ও প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাফায়িত সিফাত জানান, রোববার রাতের খাবার শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে কথা বলছিলেন। এ সময় তাদের ডেকে নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
কথাবার্তার একপর্যায়ে ইতিপূর্বে প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ তুলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ইলিয়াস ও মাজেদ। এ সময় ইলিয়াস সংবাদকর্মী সাজ্জাদ ও সিফাতকে বলেন, ‘ভেবেছিস তোদের হ্যাডম আছে। তাই যা ইচ্ছে লিখে ফেলিস। এবার দেখবি আমাদের কী হ্যাডম!’
এ পর্যায়ে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে প্রতিবাদ দেয়ার কথা বলেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। কিন্তু ছাত্রলীগ সভাপতি ক্রমেই আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন।
প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ টেনে ইলিয়াস এ সময় বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরই তো মেয়াদ নেই। সেখানে আমাদের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন আসে কেন? তোমরা যাদের বক্তব্যে নিউজ দাও তাদের মেয়াদ তখন কই থাকে? আওয়ামী লীগের সম্মেলনও তো অনেক আগে হয়েছে। সেই হিসাবে তো শেখ হাসিনাও মেয়াদোত্তীর্ণ।’
এ ঘটনায় সোমবার ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এ ছাড়া নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে থানায় জিডি করবেন বলেও জানান তারা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কুবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘আমরা দুজনের সঙ্গে ছোট ভাই হিসেবে শুধু কিছু কথা বলেছি।’
এ বিষয়ে কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘আমরা ছোট ভাইয়ের মতো বিষয়গুলো বলেছি। সাংগঠনিক জায়গা থেকে বলিনি।’
সাংবাদিকদের অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সাংবাদিকদের আপাতত জিডি করা থেকে বিরত রেখেছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটা ঠিক থাকুক।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৬ মে ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি ও রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কুবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটিকে এক বছরের জন্য অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে একই বছরের ২২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।
ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, ক্যাডার বাহিনী তৈরি করে ভিন্ন মতের অনুসারীদের হল থেকে বিতাড়িত করা, টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার মাধ্যমে কমিশন, নিয়োগ বাণিজ্য, প্রশাসনকে চাপে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার আসামিদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রদানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে।