পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায় কেনিয়া। এ জন্য দুই দেশের ব্যবসায়ী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক ও আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহী আফ্রিকার দেশটি।
রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সোমবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা সভায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপক্ষীয় ও রাজনীতিবিষয়ক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত মই লেমোশিরা এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, শিগগিরই ঢাকায় কেনিয়ার দূতাবাস স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ বিমান ও কেনিয়া এয়ারওয়েজের মধ্যে আলোচনা চলছে।
মই লেমোশিরা বলেন, ‘কেনিয়ার খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাত, আবাসন, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিল্প খাতে বাংলাদেশের জন্য বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে। কেনিয়ায় বিনিয়োগের মাধ্যমে পুরো আফ্রিকার বাজারে পণ্য সরবরাহ সম্ভব।
‘পররাষ্ট্রনীতিতে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়েছে কেনিয়া। সে কারণে কেনিয়ার কাছে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার।
কেনিয়ার প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে এই আলোচনায় এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত ও প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিকস, প্রক্রিয়াজাত সামুদ্রিক খাবার ও কৃষিপণ্য আমদানি করতে পারে কেনিয়া। এ ছাড়াও পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি, সমুদ্র অর্থনীতি ও কৃষি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো যেতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কেনিয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
আফ্রিকার ৫৪টি দেশের সমন্বয়ে মুক্তবাণিজ্য এলাকা আফ্রিকান ইউনিয়ন, পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকান কমন মার্কেট (সিওএমইসিএ) ও পূর্ব আফ্রিকান কমিউনিটির সদস্য রাষ্ট্র কেনিয়া। এসব কারণে আফ্রিকায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরিতে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
তিনি জানান, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কেনিয়ায় পোশাক, বস্ত্র, ওষুধ, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।
ব্যবসা-বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ ও কেনিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ঢাকায় কেনিয়ার দূতাবাস অফিস স্থাপন ও দুই দেশের মধ্যে আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ পারস্পরিক ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এর আগে কেনিয়ার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত স্টেলা মোকায়া ওরিনা জানান, দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ও কেনিয়ার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মধ্যে ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে সম্পর্ক জোরদার করা গেলে দুই দেশই লাভবান হবে।
সভায় এফবিসিসিআইর পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মেদ আলমগীর কেনিয়াতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রেল অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কেনিয়া সরকারের সহযোগিতা পেলে স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশটিতে বিনিয়োগ করার বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে।
এফবিসিসিআই পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ‘কেনিয়াতে বাংলাদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তা কাজে লাগাতে হবে।’
পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা স্থাপনে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দিল্লিতে কেনিয়া হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার আইরিন ওলো, ট্রেড কাউন্সিলর জেয়ার্ড বি. মাইয়্যেকা, এফবিসিসিআইর পরিচালক হাফেজ হারুন, মো. নাসের, এস এম জাহাঙ্গীর আলম (মানিক), সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির, আবু হোসেন ভুঁইয়া (রানু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।