বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বপ্ন জয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তানিয়া

  •    
  • ২৫ জুলাই, ২০২২ ১৯:১৮

তানিয়া বলেন, ‘আমার শারীরিক গঠন স্বাভাবিক না হওয়ায় পরীক্ষার সময় অনেকেই আমাকে পাশে বসতে দিতে চাইত না। সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। তবুও আমি ভেঙে পড়িনি। লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। বোঝা নয়, লেখাপড়া করে পরিবারের অবলম্বন হতে চাই।’

অনার্স প্রথম বর্ষের ক্লাস চলছে। শ্রেণিকক্ষে বসা এক মেয়ের দিকে হঠাৎ আটকে যায় চোখ। শিশু গড়নের মেয়েটি পাঠগ্রহণে ভীষণ মনোযোগী। অনার্সপড়ুয়া কারও সঙ্গে হয়তো সে ঘুরতে এসেছে- এই ভাবনা জমাট বাঁধার আগেই ভ্রম ভাঙান শিক্ষক। তার এক প্রশ্নে চটপট উত্তর দেয় মেয়েটি।

পাবনার আটঘরিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ে সোমবার গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রজব আলী জানান, ‘মেয়েটির নাম তানিয়া। সে তার ছাত্রী। শারীরিক নানা সমস্যার মধ্যে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে তানিয়া এতদূর এসেছে। তাকে নিয়ে কলেজের সবাই গর্বিত।’

তানিয়া আটঘরিয়ার চাঁদভা ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের রিকশাচালক তাজুল ইসলামের মেয়ে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। সাফল্যের সঙ্গে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে এবারই তিনি ভর্তি হয়েছেন স্নাতক শ্রেণিতে।

বাবা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জন্মের পর ঠিকঠাক বেড়ে উঠছিল তানিয়া। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় সে ঘন ঘন অসুস্থ হতে থাকে। মাঝে মাঝে সে আক্রান্ত হতে থাকে ঠান্ডা-জ্বরসহ ছোটখাটো রোগে। এরপর দেখা গেল তার শারীরিক বৃদ্ধি হচ্ছে না। তখন এলাকাবাসীর পরামর্শে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করাই। তবে এতে কোনো লাভ হয়নি। সামর্থ্য না থাকায় ভালো চিকিৎসাও করাতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তানিয়াকে নিয়ে অনেকে তামাশা করে। বলে, এই মেয়েকে এত লেখাপাড়া করিয়ে কী হবে, বিয়ে দিতে পারব না। তবে এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি ওকে সব সময় লেখাপড়ায় অনুপ্রেরণা দিয়েছি। আশা করি একদিন সে বড় মানুষ হবে।’

বাবার স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তানিয়াও। লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো চাকরি করতে চান তিনি। অভাব ঘোচাতে চান পরিবারের।

তিনি বলেন, ‘আমার শারীরিক গঠন স্বাভাবিক না হওয়ায় পরীক্ষার সময় অনেকেই আমাকে পাশে বসতে দিতে চাইত না। সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। তবুও আমি ভেঙে পড়িনি। লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। বোঝা নয়, লেখাপড়া করে পরিবারের অবলম্বন হতে চাই।’

৩ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার ২৫ বছরের তানিয়াকে নিয়ে ভীষণ আশাবাদী তার শিক্ষকরা। কলেজশিক্ষক পরিষদের সম্পাদক শরীফুল আলম বলেন, ‘কলেজে তার লেখাপড়ার খরচ মওকুফ করা যায় কি না সে বিষয়টি নিয়ে প্রিন্সিপালের সঙ্গে আলোচনা করব। তার সহপাঠীসহ অন্য শিক্ষার্থীদের বলে দেয়া হয়েছে, কেউ যেন তাকে বিরক্ত না করে বা খারাপ কিছু না বলে। আমরা মেয়েটির পাশে আছি।’

প্রথম বর্ষে তানিয়ার ক্লাস শুরু হয়েছে মাস দুয়েক আগে। এরই মধ্যে অনেক সহপাঠীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। তাদেরই একজন তাবাচ্ছুম বীথি। তিনি বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার পর খুব অল্প সময় তাকে দেখছি। খুবই শান্ত স্বভাবের মেয়ে তানিয়া। আমরা তাকে কোনোভাবেই আলাদা চোখে দেখি না। আমরা সহপাঠীরা বন্ধু হয়ে ওর পাশে আছি।’

আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, ‘সরকার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের দিকে বিশেষ নজর রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করব। তানিয়ার আজকের অবস্থান অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা।’

তানিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কথা হয় পাবনা ডায়াবেটিস হাসপাতালের মেডিসিন, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ শাহিনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনজনিত নানা সমস্যার কারণে শারীরিক গঠন অনেক সময় রোধ পায়। উন্নত চিকিৎসা দেয়া হলে এখনও অনেকটা ইমপ্রুভ (উন্নত) হওয়া সম্ভব।’

এ বিভাগের আরো খবর