দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেই সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, এই সরকার সহায়তা না দিলে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সপ্তম দিন সোমবার বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনের সময় একটা সরকার থাকবে। যে সরকারই হোক, একটা সরকার তো থাকবে। সরকার আমাদের সহযোগিতা করবে। আমরা সরকারের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারব।
‘আমরা বলব, এই সহযোগিতাগুলো আমাদের দিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার তখন না করতে পারবে না, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।’
সিইসি বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে যে সহযোগিতা-সাহায্য চাইব, সেটি কিন্তু আইনের আলোকেই চাইব এবং সে বিষয়েও আমাদের ভূমিকাটা দেখবেন।
‘সত্যি আমাদের ওপর আরোপিত ক্ষমতাটার কমান্ড আমার হাতে, মূল শক্তিটা পুলিশের হাতে, বিজিবির হাতে, সেনাবাহিনীর হাতে। শক্তিটা আমার হাতে নয়, কমান্ডটা আমার হাতে আছে। আমরা কমান্ড করলে যেন শক্তিটা রেসপন্স করে, সেই ধরনের অবস্থা আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনের প্রয়োজনেই সেটি অপরিহার্যভাবে প্রয়োজন।’
নির্বাচনের কাজটি খুব সহজ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কঠিন। কঠিন হলেও এটাকে আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে এবং এই কঠিন কাজটা, চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করতে হবে।
‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সবার মধ্যে যদি চিন্তায় ঐক্য থাকে, চেতনায় ঐক্য থাকে, আমাদের বিশ্বাসে যদি আন্তরিকতা-সততা থাকে, তাহলে আমরা যেকোনো কঠিন কাজ, যেকোনো কর্মযজ্ঞ, যতই জটিল হোক না কেন, যতই অসাধ্য হোক না কেন, সেটিকে আমাদের সাধ্যে আনতে পারব।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার প্রয়াস থাকবে। নির্বাচন কমিশনের সাধ্য অসীম নয়। অংশীজনের সহযোগিতা লাগবে।
‘রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে মোটা দাগে বিদ্যমান যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা যায়। যদি আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই প্রয়াসটা নেন, আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা প্রয়োগ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সংবিধান যদি কালকেই সংশোধন হয়, আমরা ওটার আওতায় পড়ে যাব। ১৮তম হলে তার আওতায় পড়ে যাব। ১৯তম হলেও আমরা তার আওতায় পড়ে যাব। এতে আমাদের কোনো অসুবিধা বা বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
‘আমরা অবশ্যই সংবিধান মান্য করব। আপনারা রাজনৈতিক শক্তি বা দল বা রাজনৈতিক শরিক দলগুলো যারা আছেন, আপনারা নিজেদের পক্ষে চেষ্টাগুলো করে যান। যাতে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক পরিবেশটা ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অনুকূল হয়। নির্বাচনের সময় সব দল ও অংশীজনের আন্তরিক কমিটমেন্ট প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘যে করেই হোক আমাকে জিততেই হবে। কোনোভাবেই আমি হারব না- এই মানসিকতা যদি কারো মধ্যে থাকে, সেটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এদিন চারটি দলের সঙ্গে সংলাপ সূচি নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে দুটি দল অংশ না নিলেও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি সপ্তম দিনের এ সংলাপে অংশ নিয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে ভোটের দেড় বছর আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছে ইসি। এ লক্ষ্যে ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হয়।
তবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকা বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি সমমনা দল ইসির এ সংলাপ বর্জন করেছে।
সপ্তম দিনে এসে ২৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা থাকলেও ৬টি দল সংলাপ বর্জন করায় সোমবার পর্যন্ত সংলাপে অংশ নেয়া দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮টি। এরপরও আরো ১৫টি দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি, যা চলবে এ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত।