সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানিকগঞ্জে একটি স্কুলে দুই অভিভাবক সদস্যকে বেধড়ক মারধর করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই তাদের মারধর করা হয়েছে।
তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলছেন, মারামারি নয়, হাতাহাতি হয়েছে। আর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এ বিষয়ে কথা বলছে না পুলিশ।
ঘটনাটি জেলার হরিরামপুরে ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের। স্কুলের ভেতরে রোববার বেলা ৩টার দিকের এ ঘটনায় ভিডিও ক্লিপ পেয়েছে নিউজবাংলা।
প্রায় এক মিনিটের ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, অভিভাবক সদস্য মহিউদ্দিন মঞ্জু ও মিজানুর রহমান শিকদারকে পর্যায়ক্রমে স্কুল ভবন থেকে বের করে আনা হচ্ছে। এর পরই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুলসহ আরও অনেকে তাদের কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে থাকেন। এ সময় ওই দুই অভিভাবক তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন তারা আরও চড়াও হন। বেশ কিছুক্ষণ মারধর করার পর পুলিশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়।
অভিভাবক সদস্যদের ভোটে রোববার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচনের কথা ছিল। এ জন্য দাতা সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।উপজেলা শিক্ষা অফিসের সুপারভাইজার ও নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, চলতি মাসের ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের ভোটে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির চারজন অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু দুপুরে অভিভাবক সদস্যদের মারধরের ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
তিনি আরও জানান, সভাপতি নির্বাচনে এক পক্ষ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের নাম এবং আরেক পক্ষ স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের নাম ঘোষণা করেন। দেওয়ান সাইদুর রহমান উপস্থিত থাকলেও মমতাজ বেগম অনুপস্থিত ছিলেন। তবে তার অনুসারীরা বিদ্যালয়ের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন।
সভাপতি প্রার্থী দেওয়ান সাইদুর রহমান জানান, তাদের (অভিভাবক সদস্যদের) বাইরে আনতেই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান ম্যাজিস্ট্রেটের হাত থেকে তাদের কেড়ে নিয়ে মারধর শুরু করেন। এরপর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
মারধরের শিকার অভিভাবক সদস্য মহিউদ্দিন মঞ্জু জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিদ্যালয়ের ভেতরে জড়ো হতে থাকে। দুপুরে নির্বাচনের আগে দলীয় স্লোগান দিতে থাকেন এবং স্থানীয় এমপি মমতাজ বেগমকে সভাপতি ঘোষণার জন্য বলতে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে চাইলে আমরা বিদ্যালয়ের তিন তলায় বসে থাকি। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ তিন তলায় গিয়ে আমাকে ও অভিভাবক সদস্য মিজানুর রহমানকে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। নিচে আসতেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা টেনে বের করে মারধর করতে থাকে।’
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকেই তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মারধরের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আসলে নির্বাচনের কারণে বিদ্যালয়ের ভেতরে বিএনপির লোকজন আসছিল। যার কারণে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেয় এবং এক পর্যায়ে এই ঘটনা ঘটে।’
তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মারধরের ঘটনা ঘটেনি। তবে হাতাহাতি হয়েছে। এ ঘটনার পর সভাপতি নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে এবং আইনি ব্যবস্থার জন্য অভিভাবক সদস্যদের থানায় যেতে বলা হয়েছে।
অনেক লোকের সমাগম থাকায় মোবাইল কোর্ট করাও সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এসএমএস পাঠিয়ে পরিচয় দেয়া হলেও জবাব দেননি তিনি।