‘জাইল্লাগো লইয়া আগেই রেডি ছিলাম। শনিবার রাইত ১২টার পর সাগরে গিয়া এক খেও দিছি, প্রায় ৯ মণ মাছ পাইছি। লইয়া ঘাডে আইছি। বেইচ্চা আবার তাড়াতাড়ি সাগরে নামমু।’
কথাগুলো বলছিলেন বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ইলিশ শিকার করে ফিরে আসা এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি সেলিম মিয়া।
তার মতো মাছ ধরে ফেরা অন্য জেলেদের মুখেও তৃপ্তির হাসি। জেলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এক খেও দিছি, প্রায় তিন মণ ইলিশ পাইছি। তাড়াতাড়ি নিয়া ঘাটে আইছি। ভালো দাম পাওয়ার জন্য প্রথম বাজার ধরলাম।’
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর (২৩ জুলাই) রাত ১২টার পর মাছ শিকার শুরু করেছেন বরগুনাসহ বিভিন্ন উপকূলের জেলেরা। প্রথম দিনেই জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। এতে মহাখুশি জেলে, ট্রলার মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা।
বাদুরতলা এলাকার জেলে সগীর হোসেন বলেন, ‘একফিরে যে মাছ পাইছি বেইচ্চা ভাগে মিনিমাম ৭-৮ হাজার টাহা পামু। দুই মাস বইস্যা ছিলাম। আশা করি পোষাতে পারমু।’
নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল বলে জানান জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ‘মাছ শিকারের জন্য ট্রলার, নৌকা, জাল, বরফ নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন জেলেরা। শনিবার মধ্যরাতের পর বরগুনার বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা এই তিন নদীসহ বঙ্গোপসার ও মোহনা ট্রলার ও নৌকা মাছ শিকার শুরু করে তারা।’
আবদুল খালেক বলেন, ‘মাছ শিকার শেষে রোববার সকাল ও দুপুর পর্যন্ত অনেক জেলে নৌকা ও ট্রলার ইলিশ শিকার করে ঘাঁটে ফিরেছে। তারা সবাই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পেয়ে বেজায় খুশি। এক প্রকার উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে জেলেপাড়ায়।’
জেলে সমিতির সভাপতি দুলাল মাঝিও জালে প্রচুর মাছ ধরার পড়ার বিষয়টি সামনে আনেন। ‘বলেন, দীর্ঘদিন পর জালভর্তি মাছ নিয়ে বিএফডিসি ঘাটে এসেছে নৌকা-ট্রলার। বিএফডিসি ঘাট যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জেলেরা দুই মাসেরও বেশি সময় অলস কাটিয়েছে। এখন সবাই কর্মচঞ্চল, যেন সবার মাঝে একটা উচ্ছ্বাস আনন্দ ফিরেছে। সবাই নৌকা-ট্রলার ভর্তি করে ইলিশ নিয়ে ফিরেছে।’
এ অবস্থায় বদলে গেছে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের চিত্র। সেখানকার পাইকার সগীর মিয়া জানান, ‘মাছ ঘাটে ২০-২৫টি মাছ ধরা ট্রলার নোঙর করে আছে। ওই ট্রলার থেকে ঘাট শ্রমিকরা মাছ তুলছেন। বিএফডিসি ঘাট এখন লোকারণ্য।’
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম দিনে অন্তত ২৫টি মাছ ধরা ট্রলার ঘাটে এসেছে। প্রতিটি ট্রলারই গড়পড়তা পাঁচ-ছয় মণ ইলিশ পেয়েছে। মাছের দামও ভালো। আমরা আশা করছি, দুই মাস মাছ শিকারের যে ঘাটতি তা পূরণ হবে।’
প্রথম দিনে কেমন বেচাকেনা হলো তা তুলে ধরেন বিএফডিসির বিপণন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার। বলেন, ‘প্রথম দিনে মোট ১১ হাজার ৮৬৯ কেজি মাছ বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৭৮০ কেজি। অন্যান্য মাছ বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৮৯ কেজি। মোট মাছ বিক্রি হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকার। এর মধ্যে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৮৪ হাজার ৪৬০ টাকা।’