শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি করা প্রায় ৩৭ কোটি টাকা মূল্যের দুই কনটেইনার বিদেশি মদ জব্দ করার পর র্যাব জানাল যে এর পেছনে রয়েছে একটি পারিবারিক সিন্ডিকেট। বাবা ও দুই ছেলের ওই সিন্ডিকেট ভুয়া গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের পণ্যের নামে দুবাই থেকে মদের এই বিশাল চালান দেশে আনার চেষ্টা করে।
ইতোমধ্যে এই ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী দুই ছেলের একজন রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা।
রোববার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, শনিবার র্যাব-১১ গোপন সূত্রে সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী দুটি কনটেইনারে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। দুই কনটেইনারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৬ হাজার ৮১৬ বোতল বিদেশি মদ ছিল। ভ্যাটসহ এর মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকা।
আমদানিকারকের নাম-ঠিকানা যাচাই করে দেখা যায়, তারা মূলত ঈশ্বরদী ও কুমিল্লার একটি ভুয়া গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের সুতা ও ববিনের ঘোষণা দিয়ে এসব মদ আমদানি করেছিল। মদ জব্দের পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে নাজমুল মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম নামে দুজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে সিন্ডিকেটের হোতা আজিজুল ইসলাম, মিজানুর রহমান আশিক ও আবদুল আহাদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। আশিক ও আহাদ হলেন দুই ভাই এবং আজিজুল ইসলাম তাদের বাবা।
র্যাব মুখপাত্র জানান, শনিবার রাতে সিন্ডিকেট প্রধান পিতা-পুত্রদের রাজধানীর ওয়ারীর বাসায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ মুদ্রা জব্দ করা হয়। টাকার মূল্যে যা প্রায় এক কোটি। টাকা জব্দ করা হলেও সেখান থেকে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোববার সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে ছোট ছেলে আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আবদুল আহাদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তির উল্লেখ খন্দকার আল মঈন জানান, এই পিতা-পুত্র সিন্ডিকেট মূলত বিদেশ থেকে ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করে। এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে তারা দুবাই থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে এই বিশাল মদের চালান আনে এবং এগুলো আবার তাদের সিন্ডিকেটের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে বন্দর থেকে খালাস করিয়ে নেয়।
এই মদের চালান মুন্সীগঞ্জে তাদের ওয়্যারহাউসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিভিন্ন স্বনামধন্য বারে সেগুলো সরবরাহ করার কথা ছিল।
আহাদ ধরা পড়লেও তার পিতা আজিজ ও বড় ভাই আশিককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি র্যাব। তারা দুজন শনিবার ভোরে দুবাই চলে যান। আহাদও দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানায় র্যাব।
এ ঘটনায় আর কারা জড়িত রয়েছে তা জানতে তদন্ত চলবে উল্লেখ করে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে আমরা খুঁজছি। পাশাপাশি এত বড় অবৈধ চালান কেন বন্দরের স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ল না এটাও খতিয়ে দেখবে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। তাহলে বন্দরের কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত তা বেরিয়ে আসবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘এসব মদ কোন কোন বারে সরবরাহ করার কথা ছিল তা-ও যাচাই করা হবে। আসামি আহাদ যেহেতু বারগুলোর কথা বলেছেন তাই আমরা আগে যাচাই করব তার তথ্য ঠিক আছে কি না। এরপর তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ঘটনায় একাধিক মামলা হবে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।