চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় সারা দেশে তীব্র সমালোচনার মধ্যে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয় মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন চবি শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে শনিবার র্যাবের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানোর পর ওই তিন শিক্ষার্থীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে চারজনকে ধরা খুবই কষ্টকর। তাও সেটা হয়েছে। চারজনের মধ্যে তিনজন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ঘোষণা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে প্রতিটি সংবাদমাধ্যম। তখন সবার নজরে আসে, সংবাদ সম্মেলনের পর র্যাব থেকে পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। যেখানে উল্লেখ করা হয়, ছাত্রী নিপীড়নে চবির তিন নয়, দুই শিক্ষার্থী জড়িত।
এই দুজন হলেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আজিম হোসাইন এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল আবসার বাবু। বাকি দুজনের মধ্যে নুর হোসেন শাওনকে শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলা হলেও তিনি হাটহাজারী কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। র্যাবের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আটক অন্যজন হলেন হাটহাজারী কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মাসুদ রানা।
উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার বলেন, ‘আমরা আজকে ডিসিপ্লিনারি কমিটি বৈঠকে বসব। এ পর্যন্ত যতটুকু খবর জানা গেছে, অভিযুক্ত ছয়জনের পাঁচজনকে আটক করা গেছে। তার মধ্যে দুজন আমাদের শিক্ষার্থী, দুজন হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থী। আমাদের ছাত্রের বিরুদ্ধে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা আবেদন জানাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘র্যাব থেকে ক্লিয়ার করেছে হাটহাজারী কলেজের দুজন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন।’
গত ২০ জুলাই বিকেলে হাটহাজারী থানায় যৌন হেনস্তার অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন ওই ছাত্রী। এজাহারে পথরোধ করে মারধর, ছিনতাই ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
যেভাবে যৌন নিপীড়ন
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক বলেন, ‘অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, সেদিন রাত ১০টা-সাড়ে ১০টার দিকে ওই ছাত্রী তার এক ছেলে বন্ধুসহ হলের দিকে ফিরছিলেন। আজিম ও তার গ্রুপটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাতে ঘোরাঘুরি ও আড্ডা দিতে থাকে। মোটরসাইকেল দুটি ছিল সাইফুল ও শাওনের। ঘোরাঘুরির সময় হঠাৎ তাদের নজরে আসে, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিক থেকে হেঁটে আসছে, জায়গাটি একটু নির্জন।
‘শুরুতে তারা গিয়ে ভুক্তভোগীদের চার্জ করেন। ছাত্রীর ছেলে বন্ধুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন না। অভিযুক্তরা তাদের কাছে গিয়ে এত রাতে বাইরে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করেন। ছেলে বন্ধুর কাছে দাবি করা হয় চাঁদা। একপর্যায়ে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়।
‘তখন তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরে ছয়জন তাদের ওপর আরও বেশি চড়াও হয়। ছেলেটিকে আটকে রেখে মেয়েটিকে তারা নির্যাতন করে। প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারে, তারপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করে।’
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ ও টাকা পয়সা নিয়ে নেয়ার পর তারা (জড়িতরা) ঘটনাস্থল ত্যাগ করে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘তখন ভুক্তভোগীরা একটি হলে গিয়ে এক ছাত্রের মোবাইল থেকে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ জানায়।’
ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত না দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাইনি। যার নেতৃত্বে ঘটনা ঘটেছে, আজিম, সে অকপটে বলেছে, ঘটনাটি ঘটেছে তাৎক্ষণিক। কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না বা মেয়েটিকে টার্গেট করার কোনো প্ল্যান ছিল না। এমনকি মেয়েটিও আমাদের বলেছে, সে আজিমকে আগে থেকে চিনতো না।’
আজিমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজিম যেহেতু এলাকায় অবস্থান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, এই কারণে এলাকায় তার প্রভাব ছিল। এই প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে সে হয়তো ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জেনেছি। এগুলো তদন্ত করে আমরা বের করব।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত সবাই বলছে তারা ছাত্রলীগ সমর্থন করে। সমর্থন তো যে কেউ করতে পারে। কিন্তু তাদের কোনো পদ-পদবি নেই। তারা যেটা বলছে যে, তাদের মধ্যে দুই গ্রুপেরই সমর্থক রয়েছে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের কেউ না।
‘তাদের ভাষ্য অনুযায়ী একেক জন একেক গ্রুপ সমর্থন করে। সমর্থন করা মানেই আমি বলতে পারি না যে, তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সমর্থন তো যে কেউ করতে পারে, জনসাধারণ হিসেবে তার অধিকার রয়েছে।’