যশোরে গত অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়েছে। এই মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গেছে। রপ্তানি হয়েছে বিদেশেও।
২০২০-২১ অর্থবছরে যশোরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ টন। এর মধ্যে জেলায় চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার ৫৮৯ টন। সেই হিসাবে এ জেলার উদ্বৃত্ত মাছ ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৬৯ দশমিক ১৪ টন।
উদ্বৃত্ত মাছের মধ্য থেকে গত অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৩০১ দশমিক ৮৯ টন মাছ রপ্তানি হয়, যা থেকে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার ১৫৫ মার্কিন ডলার এসেছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকা।
শনিবার দুপুরে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মেদ।
সম্মেলন থেকে আরও জানা গেছে, যশোরে মোট ৭২ হাজার ১৫৫ দশমিক ১৭ হেক্টর জলাশয় রয়েছে। আর মাছ চাষি রয়েছেন ৮৮ হাজার ৭৬২ জন। এ ছাড়া জেলায় ৩ হাজার ৪৫৩ জন মাছ বিক্রেতা ও ১ হাজার ১৫৫ জন পোনা বিক্রেতাও রয়েছেন।
যশোর জেলায় কার্পজাতীয় মাছের রেণু উৎপাদন হয় ৬৯ দশমিক ২৮ টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৫০ দশমিক ৩৮ টন রেণু জেলার বাইরে যায়।
এ ছাড়া রুই-জাতীয় মাছ ১ লাখ ৫৩ হাজার ২০৪ দশমিক ৬৯ টন, পাঙাশ ১৫ হাজার ৫৩৯ দশমিক ১০ টন, তেলাপিয়া ২৫ হাজার ৬৪০ দশমিক ৪৭ টন, কৈ ১ হাজার ৩০২ দশমিক ৪৮ টন, শিং ও মাগুর ১ হাজার ৪১ দশমিক শূন্য ৯ টন, গুলশা ৮১৭ দশমিক ৫৬ টন, পাবদা ৯৮২ দশমিক শূন্য ৭ টন, গলদা চিংড়ি ৮ হাজার ৭৯ দশমিক ৮১ টন, বাগদা চিংড়ি ৩৫৪ টন এবং অন্যান্য মাছ ১৭ হাজার ৮৯৭ দশমিক ১৪ টন উৎপাদন হয়েছে। মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা ৮০২ দশমিক ২০ লাখ ও কার্পজাতীয় পোনা ১৪ হাজার ১১৮ দশমিক ৭৭ লাখ উৎপাদন হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
যশোর থেকে যেসব মাছ রপ্তানি হচ্ছে তার মধ্যে পাবদা, পারশে, তেলাপিয়া, পাঙাশ, কৈ, টেংরা ও গজার অন্যতম। রপ্তানি করা এসব মাছের মধ্যে ৭০ শতাংশই পাবদা মাছ।
মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে যশোরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন
এবার যশোরে মৎস্য সপ্তাহের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শনিবার মাইকিংসহ প্রচারণা, রোববার র্যালি, আলোচনা সভা, সফল মাছ চাষিকে পুরস্কার প্রদান, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সোমবার প্রান্তিক পর্যায়ে মৎস্যচাষি ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়, মঙ্গলবার অবৈধ জালের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বুধবার মাছ চাষবিষয়ক বিশেষ পরামর্শ প্রদান, পুকুরের মাটি ও পানি পরীক্ষা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বৃহস্পতিবার সুফলভোগীদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ প্রদান এবং শুক্রবার মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যশোর মৎস্য গবেষণা উপকেন্দ্রের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মেদ ও সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমানসহ আরও অনেকেই।
এদিকে যশোরে মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে ছয়টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছে মৎস্য বিভাগ। প্রতিবন্ধকতাগুলো হচ্ছে- মাঠ পর্যায়ে জনবল সংকট, জেলা পর্যায়ে যানবাহনের অপ্রতুলতা ও উপজেলা পর্যায়ে একেবারে না থাকা, মৎস্য খাতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মূল্য বেশি, চিংড়িসম্পদ উন্নয়নে কোনো প্রকল্প না থাকা, মাটি ও পানি পরীক্ষা ক্যাম্প পরিচালনার ব্যবস্থা না থাকা এবং প্রণোদনামূলক ঋণ ও কার্যক্রম না থাকা।