জাহেদ জোহা ও সানি; দুজনই ঝালকাঠির রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জাহেদ দশম শ্রেণিতে আর নবম শ্রেণিতে পড়ে সানি। স্থানীয় কিশোরদের নিয়ে তাদের পরিচালিত দুটি গ্যাং এখন উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজাপুর উপজেলার দুই নারী নেত্রীর সন্তান জোহা ও সানি। জোহার মা আফরোজা আক্তার লাইজু রাজাপুর উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের ভাইস চেয়ারম্যান। আর সানির মা লিপি বেগম উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। ঝালকাঠি জেলা পরিষদের আগামী নির্বাচনে নারী কোঠায় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুলছাত্র জোহা ও সানি নিজ নিজ মায়ের ক্ষমতার দাপটকে পুঁজি করে রাজাপুরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব তাদের লাগাম টেনে ধরতে অভিভাবক ও প্রশাসনের প্রতি দাবি উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা লাইজুর ছেলে জাহেদ জোহার মাদক সেবনের কিছু ছবি ও ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ভাইরাল হয়। গ্যাং পাল্টে অন্য দলে চলে যাওয়া কেউ এই ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে বলে ধারণা অনেকের। মা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেত্রী হওয়ায় জোহার বিষয়ে রাজাপুরে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
সম্প্রতি সানির নেতৃত্বাধীন গ্যাংয়ের সঙ্গে জোহার গ্যাংয়ের সংঘর্ষ বাঁধলে তাদের দুজনের পাশাপাশি ফাহিম নামের এক কিশোর গুরুতর আহত হয়। সানি ও ফাহিম বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর জোহা রাজাপুরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছে বলে খবর রটেছে।
শুধু সাম্প্রতিক সংঘর্ষই নয়, এর আগেও ছোট-বড় সংঘর্ষ ও হামলা, মাদক আড্ডা, ইভ টিজিংসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে গ্যাং দুটির বিরুদ্ধে।
দুই গ্যাংয়ের সাম্প্রতিক বিরোধ নিয়ে জোহার মা আফরোজা লাইজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সানির মামা মনিরুজ্জামান রাজাপুর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তার দাপটেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভাগনে সানি। মনিরুজ্জামান উদ্যোগ নিয়ে দুই পক্ষের ছেলেদের মধ্যে একটা সমাধান করে দিতে পারে। কিন্তু সে কাউকেই ডাকেননি।’
এদিকে সানির মা লিপি বেগম জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে প্রার্থী হবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ অবস্থায় ছেলের কারণে তার ইমেজ নষ্ট হচ্ছে- এমনটাই বলছেন রাজাপুরের অনেক জনপ্রতিনিধি।
অন্যদিকে সানির মামা মনিরুজ্জামান সংসদ নির্বাচনে রাজাপুর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে অনেক বছর ধরেই মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। কিন্তু ভাগনে সানির কর্মকাণ্ডে স্থানীয় রাজনীতিতে তাকেও বিতর্কিত করছে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের বিষয়ে মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘স্কুলপড়ুয়া ভাগনেকে কুপিয়ে আহত করেছে জোহা ও তার দলবল। উচ্ছৃঙ্খল সন্তানের লাগাম তার বাবা-মাকেই টানতে হবে। রাজাপুরে সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে জোহার কিশোর গ্যাং।’
কিশোর গ্যাং দুটির লাগাম টেনে ধরার প্রসঙ্গে রাজাপুর থানার ওসি পুলক চন্দ্র রায় বলেন, ‘জোহা বা সানির গ্যাংয়ের বিষয়ে আগে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। তাই পুলিশের নজরে ছিল না ওরা। তবে বর্তমান ঘটনায় কিশোর মাস্তানি বন্ধে পুলিশ কড়া নজর রাখছে।’
তবে কিশোরদের দমাতে অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন ওসি।