গাজীপুরের কোনাবাড়ির এসএসসি-৯৬ ব্যাচের ১৩ বন্ধু হঠাৎ পরিকল্পনা করেন পদ্মা সেতু দিয়ে কুয়াকাটা ঘুরতে যাবেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন আত্মিয়-পরিচিতজনসহ আরও ১০ জন।
দুই মাইক্রোবাসে তারা বৃহস্পতিবার ভোরে রওনা হন কোনাবাড়ি থেকে। বরিশালের উজিরপুরে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাসটিকে বিপরীত দিক থেকে আসা বাস চাপা দেয়।
ওই মাইক্রোতে ছিলেন ১০ জন। তাদের মধ্যে ৬ বন্ধু ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন।
নিহতদের বাড়ি গাজীপুর সিটি করপোরেশন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর গ্রামে। কোনাবাড়ির পূর্ব কৃষ্ণপুর নছের মার্কেট প্রাঙ্গণে শুক্রবার তাদের জানাজা হয়। এর পর নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে হয় দাফন।
নিহতরা হলেন রুহুল আমিন, হারুনর রশীদ, জালাল হোসেন, আব্দুস সালাম, শহিদুল ইসলাম ও হাসান সরকার। প্রাণহানির খবর পৌঁছালে এই ৬ জনের বাড়িতে শুরু হয় মাতম। এলাকাবাসীও শোকে কাতর।
হারুনর রশীদের বাড়ি গিয়ে জানা গেছে, তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বৃদ্ধ মায়ের আর্তনাদে প্রতিবেশীদেরও চোখ অশ্রুসিক্ত।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের সময় দেখি আমার ছেলে কুয়াকাটা ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে। যাওয়ার সময় ছোট নাতির কপালে চুমু খেয়ে গেছে। আমার কলিজাটা কই হারিয়ে গেল।’
হারুনের সঙ্গে প্রাণ হারান তার ফুফাতো ভাই রুহুল আমিন। তারা একই ব্যাচের ছাত্র, ছিলেন বন্ধুর মতো।
হারুনের বাড়ির কাছেই রুহুলের বাড়ি। স্বামী হারিয়ে দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা রুহুলের স্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও কুয়াকাটা ঘুরতে বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হয় হারুন। যাওয়ার সময় আমার শাশুড়ির কাছ থেকে দুই হাজার টাকা চেয়ে নেয়। কে জানত ঘুরতে গিয়ে সে আর কখনও ফিরে আসবে না।’
ওই দুর্ঘটনার সময় আরেক মাইক্রোবাসে থাকায় বেঁচে যান কোনাবাড়ির হাসেম খাঁন।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভোরে কোনাবাড়ির এসএসসি ৯৬ ব্যাচের ১৩ বন্ধু কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা হই। ওইদিন একই এলাকার আরও ১০ জন কুয়াকাটা ভ্রমণে যায়। আমাদের গাড়িটি বরিশালের জয়শ্রী বাজারে চা বিরতির জন্য থামে। তখন অন্য গাড়িটি আমাদেরকে ওভারটেক করে চলে যায়।
‘কিছুক্ষণ পর আমরা রওনা দিয়ে ৪ কিলোমিটার সামনে উজিরপুর এলাকায় গিয়ে দেখি মাইক্রোবাসটির সঙ্গে একটি বাসের সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা উদ্ধারকাজে যোগ দেই, হতাহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাই। বৃহস্পতিবার রাতে ৬ জনের লাশ কাঁধে নিয়ে এলাকায় ফিরেছি।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসের চালক আফসার উদ্দিন রনির সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তিনি বলেন, ‘আমিসহ ১০ জন ছিলাম মাইক্রোবাসে। গাড়িটা আমি চালাচ্ছিলাম। সবাই ছিলাম একই এলাকার। কুয়াকাটা ঘুরতে যাচ্ছিলাম। আমার গাড়ির স্পিড ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। ছিলাম সঠিক সাইডেই।
‘নতুন শিকারপুর এলাকায় আসার পরপরই বরিশাল থেকে আসা একটি বাস বেপরোয়া গতিতে রং সাইডে এসে আমার গাড়িতে মেরে দেয়। শুনেছি বলাবলি হচ্ছে যে, আমার গাড়ির চাকা ফুটো হয়েছিল। তবে এমন কিছুই হয়নি। আমার গাড়ি সড়কে দাঁড়ানোও ছিল না, আর চাকাও পাংচার হয়নি। আমি ঠিক ছিলাম।’
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে ৪ জন ও হাসপাতালে নেয়ার পর ২ জনের মৃত্যু হয়।