রেলের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত ৬ দফা দাবিতে শুক্রবারও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মসূচি পালন করতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। কমলাপুর রেল স্টেশনের বাইরে রনিকে প্রশ্ন করায় এক আওয়ামী লীগ কর্মী উজ্জ্বলকে ধাওয়া দিয়েছেন সাধারণ জনতা। তার প্রশ্ন অস্বাভাবিক লাগায় তাকে ধাওয়া দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন উপস্থিত মানুষ।
জনৈক উজ্জ্বল নিজেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন।
গত বৃহস্পতিবারের মত শুক্রবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি মহিউদ্দিন রনি। স্টেশনের প্রবেশের মুখেই কলাপসিবল গেট আটকে দেয়া হয়। ফলে স্টেশনে প্রবেশ না করতে পেরে গেটের বাইরেই অবস্থান নেন তিনি।
রনি সেখানেই তার কর্মসূচি চালাবেন বলেও ঘোষণা দেন।
অবস্থানের কিছুক্ষণ পর নিজেকে সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দেয়া এম এইচ উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তি রনির আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
রনি যখন সেখানে কর্মসূচি পালন করছিলেন তখন উজ্জ্বল রনিকে প্রশ্ন করেন, আপনি তো আন্দোলন করছেন ৭ জুলাই থেকে। কিন্তু আপনি যদি ১৩ তারিখের টিকিট কেটে থাকেন তাহলে আগেই আন্দোলন কীভাবে করলেন। যার জবাব দেন রনি।
রনি বলেন, ১৩ তারিখে তিনি টিকিট কাটেননি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন। এর পরও উজ্জ্বল রনিকে প্রশ্ন করতেই থাকেন। একপর্যায়ে রনি উজ্জ্বলকে বলেন, আপনার অভিপ্রায় কি সেটা আমাকে বলেন তো।
রনি উজ্জ্বলের কাছে জানতে চান, 'আপনি কাদের লোক? আপনি কে?' আর তখনই উপস্থিত জনতা সমস্বরে উজ্জ্বলকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন আপনি কে। যাদের অনেকে উজ্জ্বলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
তখন তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষ। আমার নাম এম এস উজ্জ্বল। কিন্তু উপস্থিত জনতা বলতে থাকেন আপনি সাধারণ পাবলিক না। আপনি দালাল।’
উপস্থিত জনতা উজ্জ্বলের উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে যান। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে রনি সামনে এগিয়ে আসেন। জনতার ক্ষোভ থেকে তাকে বাঁচান। পরে জনতার রেশ থেকে বাঁচাতে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন উজ্জ্বলকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে রিকশায় তুলে দেন। কিন্তু উজ্জ্বল রিকশা থেকে নেমে দৌড় দেন। তখন মানুষজনও তার পিছু নিয়ে তাকে ধাওয়া দেন।
পরে উজ্জ্বল সংবাদমাধ্যরে কাছে দাবি করেন, তিনি সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
কেন এখানে এসেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি ওরা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাই। কিন্তু ওরা আমাকে মেরেছে।’
সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের কোন পোস্টে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিটি এখনও ঘোষণা হয়নি।’
উজ্জ্বল বলেন, ‘আমার কাছে রনির আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ বলেই আমি উনাকে প্রশ্ন করেছি। কিন্তু তার সঙ্গে থাকা অন্যরা আমাকে মেরেছে।’
রনিকে কমলাপুর রেল স্টেশনে ঢুকতে বাধা
শুক্রবার বিকেলে রনি কমলাপুর রেল স্টেশনে অবস্থান নিতে গেলে তাকে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা বাধা দেয়। এ সময় রনি স্টেশনেই বাইরেই অবস্থান নেন। রনি বলেন, ‘৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত যতই ষড়যন্ত্র হোক, অবস্থান চলবে।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে স্টেশনের ব্যাপক রেল পুলিশ, আনসার ও গার্ড মোতায়েন করা হয়।
বৃহস্পতিবারও কমলাপুর রেল স্টেশনে রনিকে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময় বাধা অতিক্রম করে রনি স্টেশনে ঢুকতে পেরেছিলেন।
এ ঘটনার পর মহিউদ্দিন রনি বলেন, ‘আমি তাদের বারবার বলেছি আমি জুন মাসের ১৩ তারিখে হেনস্তার শিকার হয়েছি, আর জুলাই মাসের ৭ তারিখ আন্দোলন শুরু করেছি। আমার আন্দোলন নস্যাৎ করতে নানান কুচক্রী মহল বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে।’
রনি বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমাকে স্টেশনে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এতে কি আমার নাগরিক অধিকার খর্ব হচ্ছে না?’
‘সহজ ও বাংলাদেশ রেলওয়ের যে সিন্ডিকেট এত দিন ধরে ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছিল তারা আজকে যা করল তাতে কিন্তু সাধারণ মানুষ ক্ষেপে গেছে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কিন্তু ওই লোককে প্রটেক্ট করার চেষ্টা করেছি। এমনও হতে পারে তাদের মধ্যেই কেউ দুটি পক্ষ পাঠিয়ে দিয়েছে। এক পক্ষ ঝামেলা করছে, আরেক পক্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করছে। প্রকৃত ঘটনা কি তা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।’
এ বিষয়ে জানতে কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল হককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।