সরকার প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক লোডশেডিং দেয়ার কথা থাকলেও হবিগঞ্জের চিত্র ভিন্ন। সেখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা শিডিউল ঘোষণ করে লোডশেডিং করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এমন কি সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না জরুরি সেবার ক্ষেত্রেও।
দিনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাতপাতালে ভর্তি রোগী, তাদের স্বজন, সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়িরা। প্রতিটি ফিডারে রাতে এক থেকে দুই ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল এলাকায় প্রতিদিন ৫ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেক বাসিন্দা। জেনারেটর ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক রোগীরা রয়েছেন বেশি কষ্টে।
বাহুবলের অফিজুর রহমান তার ৬ মাসের নাতিকে নিয়ে দুইদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, ‘গতরাতে বিদ্যুতে যে কষ্ট দিছে কিতা কইতাম। নাতির ডায়রিয়া হইছে। হাসপাতালে আইছি সুস্থ্য হওয়ার লাগি। এখন কারেন্ট থাকে না। রাতে শরীর ঘাইমা অবস্থা খারাপ। এখন দেখি সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হইব।’
মনোয়ারা বেগম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘গতকাল রাতে সন্ধায় বিদ্যুৎ নিছে এক ঘণ্টা পর পর। রাত ১০টার সময় আবার নিছে, দিছে ১২টার সময়। রাতে হাসপাতালের ভেতরে মোবাইলে লাইট আর মোমবাতি জ্বালিয়ে চলতে হয়। অন্ধকার আর গরমের কারণে শিশুরা কান্নাকাটি করে।’
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার বলেন, ‘পুরাতন ভবনে জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। নতুন ভবনেও ১৫ দিনের মধ্যে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হবে।’
ঘন ঘন লোডশেডিং নিয়ে শহরের অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাতে দুইবার বিদ্যুৎ নিছে। দিনের বেলাও বিদ্যুৎ থাকে না। এখন এভাবে যদি প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ নেয় তাহলে বাঁচন কীভাবে। ঘরের বাচ্চারা রাতে ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি করে।’
সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আহাদ বলেন, ‘গরমে শিশুদের শরীরে ঘামাছিসহ বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। সরকার বলছে, প্রতিদিন এক ঘণ্টা লোডশেডিং হবে। কিন্তু হবিগঞ্জের পিডিবি ৬ ঘণ্টার বেশি করে লোডশেডিং করছে।’
রাত ৮টার পর সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দশনা দিয়েছে সরকার। এক দিকে রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ, অন্যদিকে দিনের বেলা ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে বেকায়দায় বেশি পড়ছেন ব্যবসায়িরা।
ব্যবসায়িরা বলছেন, তীব্র গরমে ক্রেতা না থাকায় বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় দিন পার করছেন। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ের ফাঁদে দিশেহারা যন্ত্র চালিত ছোট ছোট কারখানাগুলো। দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে কাজ, অলস সময় কাটাচ্ছেন কর্মচারীরা।
হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সরকার বলেন, ‘হবিগঞ্জ জেলায় পিডিবি গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ মেগাওয়াট। কিন্তু প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে ৯ মেগাওয়াট। যে কারণে নির্দেশনা এক ঘণ্টা থাকলেও প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’