বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হালদায় এক সপ্তাহে ৩ ডলফিনের মৃত্যুর কারণ কী

  •    
  • ২২ জুলাই, ২০২২ ১১:৫৮

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির পরিচালক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ড. মনজুরুল কীবরিয়ার মতে, হালদা থেকে উদ্ধার এসব ডলফিনের মৃত্যুর প্রধান কারণ জাল। চোরা শিকারিদের জালের আঘাতেই অধিকাংশ ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে রাউজানের পশ্চিম গুজরা এলাকা থেকে ৬০ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়।

এর ১২ ঘণ্টা আগে একই স্থান থেকে ১০৩ কেজি ওজনের আরেকটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। তারও আগের বৃহস্পতিবার রাউজানের গহিরায় হালদার শাখা খাল থেকে উদ্ধার করা হয় আরেকটি মৃত ডলফিন।

এ নিয়ে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হালদা থেকে ৩৮টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে।

এভাবে একের পর এক ডলফিন মারা গেলে হালদার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে পারে বলে দাবি গবেষকদের।

আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট সাত প্রজাতির ডলফিন পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রধান গাঙ্গেয় ডলফিন। তবে দেশে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে আইইউসিএনের লাল তালিকাভুক্ত এটি।

স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটি সাধারণত দেশীয় মিঠা পানির নদীতে পাওয়া যায়। দেশের পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, সাঙ্গু ও কর্ণফুলীতে গাঙ্গেয় ডলফিনের উপস্থিতি থাকলেও গবেষকদের মতে সবচেয়ে বেশি (১৪৭টি) রয়েছে হালদায়।

Platanista gangetica প্রজাতির এই প্রাণীটি স্থানীয়ভাবে শিশু, শুশ, হুস, হুচ্চুম, শুশুক ও ডলফিন নামে পরিচিত। নদীতে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে গাঙেয় ডলফিন। তাই দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে এই প্রাণী হারিয়ে গেলে ক্ষতি হতে পারে বাস্তুতন্ত্রের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির পরিচালক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ড. মনজুরুল কীবরিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণীই বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গাঙ্গেয় ডলফিন বিপন্ন একটি প্রাণী, আইইউসিএনের লাল তালিকাভুক্ত। তাই এটি রক্ষা করা খুবই দরকার। গাঙ্গেয় ডলফিনকে বলা হয় ইকোলজিক্যাল ইন্ডিকেটর বা পরিবেশ নির্দেশক।

‘অর্থাৎ, পানিতে এটির উপস্থিতি থাকলে বলা হয়, পানি দূষণমুক্ত আছে। সেখানে মাছ নিরাপদে থাকবে। এ ছাড়া নদীর দুর্বল ও মরা মাছগুলো হচ্ছে ডলফিনের খাবার। তাই নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখতেও এর ভূমিকা আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে হালদায় ১৬৭টি ডলফিনের উপস্থিতি পেয়েছিলাম আমরা। ২০২০ সালে সেই সংখ্যা কমে হয় ১২৭টি। ২০২২ সালে হালদায় ১৪৭টি ডলফিনের উপস্থিতি পেয়েছি যা আমার জানা মতে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যার। তাই এখনই হালদার গাঙেয় ডলফিন রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।’

এই গবেষকের মতে, হালদা থেকে উদ্ধার এসব ডলফিনের মৃত্যুর প্রধান কারণ জাল। চোরা শিকারিদের জালের আঘাতেই অধিকাংশ ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে।

আরেক হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা বিশ্বে ডলফিন মৃত্যুর ৭০ শতাংশ কারণ হচ্ছে বৈদ্যুতিক জাল। এই জালের বিশেষত্ব হচ্ছে জালের সুতা শব্দতরঙ্গ শোষণ করে নেয়। ডলফিন চোখে না দেখার কারণে প্রতিধ্বনি তৈরির মাধ্যমে চলাচল করে। এটি চলাচলের সময় জালের অবস্থান প্রতিধ্বনির মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারে না।

‘হালদা নদীতেও ডলফিন মৃত্যুর অন্যতম কারণ অবৈধভাবে মাছ ধরায় ব্যবহৃত এই বিশেষ জাল। জালে আটকা পড়ে ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে। এ ছাড়া খাদ্যের অভাব, দূষণ, পানির গুণাবলি পরিবর্তন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোও আছে।’

হালদায় গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যু রোধে জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল ও শাখা খালে বিষ দেয়া বন্ধসহ ১১টি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন এই গবেষক।

পদক্ষেপগুলো হলো-

১. নদীতে অবৈধভাবে যেকোনো ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

২. অতিরিক্ত ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে।

৩. হালদা ও এর শাখা খালসমূহ সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত রাখতে হবে।

৪. বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে।

৫. হালদার যে স্থানে ও শাখা খালে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে, সেখান থেকে পলি অপসারণ করে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৬. নিয়মিত হালদা ও এর শাখা খালে পানির গুণাবলি পরীক্ষা করতে হবে।

৭. কমিউনিটি বেইজড ডলফিন ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে হবে যেখানে বন বিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

৮. ডলফিনের পরিবেশগত গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্থানীয় জেলে ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৯. কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহারে নিরুৎসাহিত ও জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

১০. ডলফিন ডাটাবেজ তৈরি করে নিয়মিত ডলফিনের সংখ্যা ও আবাসস্থল মনিটরিং করতে হবে।

১১. ডলফিন সংরক্ষণে আলাদা বিশেষজ্ঞ মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে

১২.বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-(ডলফিন ও তিমি আইন) এর ৩৭তম ধারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

হালদায় ডলফিনের মৃত্যু বন্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হালদায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তাই বৈধ উপায়ে জাল বসানোর সুযোগ নেই। আমরা মৎস্য কর্মকর্তারা, নৌ পুলিশ ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন একসঙ্গে তিনটি সংস্থা হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছি৷

‘এরপরও গভীর রাতে চোরা শিকারিরা অবৈধভাবে হালদায় মাছের জাল বসায়। এসব জালে কিছু ডলফিন আঘাত পায়, তবে এদের মৃত্যুর পেছনে অন্য কারণও থাকতে পারে। আমরা হালদার মা মাছসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মাছ শিকার বন্ধের চেষ্টা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর