শেরপুরের সদরের লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রাস্তার দুই পাশের সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় ১৫টি কাটা গাছ জব্দ করেন।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই শ্রমিকদের দিয়ে এ গাছগুলো কাটান।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে সদরের কুসুমহাটি থেকে ইলশা বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারের গাছগুলো সৌন্দর্যবর্ধন করে ছায়া দিয়ে আসছে। এ পথে চলাচল করে হাজারো মানুষ। তাদের মাথার ওপরের রোদ থেকে রক্ষা করত এই গাছগুলো। শুধু তাই নয়, গাছগুলো থাকায় রাস্তার দুই ধারের মাটি ভেঙে যেত না।
তবে বুধবার সন্ধ্যায় কোনো নিয়মশৃঙ্খলা ও আইনকানুন না মেনে চেয়ারম্যান এসব গাছ কাটার নির্দেশ দেন। পরে গাছগুলো সরিয়ে নেন চেয়ারম্যানের লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বুধবার চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা রাস্তার ধারে গাছ কেটে সাবাড় করেছে। অথচ এই গাছ কাটা দেখার বা রোধ করার কেউ নেই।
‘আমরা বাধা দিতে গিয়েছিলাম তবে তারা বলেছে ওপরের মহলের নির্দেশেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। পরে আমরা চলে এসেছি।’
একই ইউনিয়নের বাসিন্দা আলাল উদ্দিন বলেন, ‘ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গাছ কাটার ব্যাপারে প্রতিরোধ করা হয়েছে, কিন্তু তারা মানেন নি। তারা বলেছেন ওপরের নির্দেশেই গাছ কাটা হচ্ছে।’
লছমনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি স্থানীয় লোকজনের কাছে শুনেছি চেয়ারম্যান গাছগুলি কাটিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ।’
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন শেরপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন সোহেল বলেন, ‘সরকারি বিধি না মেনে গাছ কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। কে বা কারা গাছ কেটেছে, তা আমি কিছুই জানি না।’
শেরপুর সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রেজ্জাক বলেন, ‘সরকারি যত গাছ আছে তা বিক্রি করতে হলে বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে ও বন বিভাগ এর মূল্য নির্ধারণ করে দেবে।
‘এসব নিয়ম না মানলে সেটি অবৈধ হবে। তবে রাস্তার ধারে গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের কাছে কেউ অনুমতি বা অনাপত্তিপত্র নেয়নি। তার মানে এটা সম্পূর্ণ অবৈধ।’
শেরপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, ‘রাস্তার ধারে গাছ কাটার খবর জানার পরপরই গাছগুলো জব্দ করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে রাখা হয়েছে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’