সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহতদের সবাই অপরাধী বলে দাবি করেছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) পঙ্কজ কুমার সিং।
পিলখানায় বিজিবি সদরদপ্তরে পাঁচ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন দাবি করেন।
বিএসএফ ডিজি বলেন, ‘সীমান্তে যারা বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন, তারা মাদক-মানব-গরু চোরাকারবারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আর অপরাধীরা রাতের আঁধারে সীমান্ত এলাকায় অপরাধকর্ম করে থাকে। আর ওই সময় তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।’
সীমান্তে হত্যার শিকার হওয়া লোকজনকে কীসের ভিত্তিতে অপরাধী বলা হচ্ছে এবং তাদের শরীরের ওপরের অংশে গুলি লাগার পরও কেন এগুলো টার্গেটেড কিলিং নয়, সে প্রশ্ন করা হয় বিএসএফ মহাপরিচালককে। জবাবে তিনি বলেন, ‘জুডিশিয়াল সিস্টেমে বা কোনো অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা কাউকে অপরাধী বলতে পারি না। আমরা বর্ডার বাহিনীর সঙ্গে কথা বলি, কলকাতা পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করি। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, সীমান্তে দুই দেশের অপরাধী ও চোরাকারবারিরা নিয়মিত যাতায়াত করে।
‘আমাদের উভয় দেশের সীমান্তবর্তী দুই এলাকাতেই খারাপ মানুষ আছেন। তাদের কারণে সীমান্তে অপরাধ সংঘটিত হয়, চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটে। গরু পাচার, শিশু ও নারী পাচারের ক্ষেত্রে অপরাধীরা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে।’
বিএসএফ ডিজি বলেন, ‘আমরা প্রথমে নন-লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র) ব্যবহার করি, যাতে প্রতিরোধ প্রাণঘাতী না হয়। অপরাধীদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮৯ বিএসএফ সদস্য সীমান্তে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।’
বিজিবির সঙ্গে সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যৌথভাবে সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ দমন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় আনতে কাজ করছি।’
প্রতিবার সীমান্ত সম্মেলনে হত্যা বন্ধে আলোচনা হয়। এরপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘এই প্রশ্ন প্রতি বছরই শুনতে হয়। বিজিবি ও বিএসএফ খুবই পেশাদার বাহিনী, তবে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়েও আলাদা।
‘আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে থাকি কীভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যায়। মিনিস্ট্রি, বিজিবি ডিজি থেকে বিজিবির সব পর্যায়ে আমরা কথা বলেছি।’
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান, মানব পাচার, অবৈধ সীমান্ত পারাপার এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোচনা করেন। এসব অপরাধ দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিএসএফের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। অন্যদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভেয়ার জেনারেল অফ বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।