‘ছাওয়ালের বয়স এক বছর তিন মাস। কত আরাম করে ঘুমাত কিছুদিন আগেও। ফ্যান চলত সেই বাতাসে, মনিদা (শিশু) রাতে মার কোলে ঘুম দিত। এই কদিন কারেন্ট থায়ে না। দিনে সমস্যা নেই, রাতি তো টিকা মুশকিল। ছোট বাচ্চারা ঘুম ভেঙে কানতি থায়ে। রিকশা চালাইয়ে বাড়ি যেইয়ে শান্তিতে নিই। ঘামা শরীরে শুধু পানি। ঘর অন্ধকার। বিপদ রে ভাই, খুব বিপদে আমরা।’
লোডশেডিংয়ে রিকশাচালক মনির হোসেন এভাবেই নিজের কষ্টের কথা জানালেন। বুধবার সকালে মাগুরা সদরের এক ইলেকট্রিক দোকানে তার সঙ্গে দেখা। তিনি চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন কারেন্টের মূল্য বুঝিনি। কারণ এত বাজে অবস্থা তো ছিল না বহু বছর। তাই এহন কারেন্ট যাওয়া-আসায় বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে। চার্জার ফ্যান কিনতি আইছি। ২০০ টাকার ফ্যান চাইছে ৩০০ টাকা। ৫০০ টাকার ফ্যান এখন ৮০০ টাকা।’
মাগুরায় একদিকে ভ্যাপসা গরম। অন্যদিকে নিয়ম করে লোডশেডিং হওয়ায় মানুষের জীবনে নেমে এসেছে নানা রকম ভোগান্তি। দিনের বেলায় কাজের সময় গরম মেনে চললেও রাতে ঘুম কেড়ে নিচ্ছে লোডশেডিং।
এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যাটারি চালিত চার্জার ফ্যানের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। তবে এই সুযোগে ইলেকট্রিক ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম হাঁকাচ্ছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ উঠছে ।
সবজি বিক্রেতা মো রবিউলের বাড়ি মাগুরা সদরের বড়ই গ্রামে। বলেন, সেখানে বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসে। দুই দিন ধরে লোডশেডিং চলছে টানা ২ ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টায় ৫ বার করে। এতে তার পরিবারের রাতের ঘুম নেই।
দিনের গরম রাতেও থাকে। ফ্যান না চললে ছোটরা জ্বালাতন শুরু করছে। দুপুরে কোনো ঘুম নেই, রাতে পাখা দিয়েও যেন বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানো যাচ্ছে না।
হোটেল ব্যবসায়ী মামুন বলেন, ‘হোটেলে মানুষ খেতে আসে একটু বাতাসের মধ্যে বসে। দুপুরে লোডশেডিং কিংবা সন্ধ্যায় হলে কাস্টমার হোটেলে বসতে চায় না। কারেন্ট নাই দেখে চলে যাচ্ছে। এতে আমাদের কেনাবেচা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আইপিএস বানাতে অনেক টাকার প্রযোজন। কী করব ভাবতেছি।’
এই পরিস্থিতিতে শহরের সাবুতলার ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী সুলাইমান রিপনের বেশ আর্থিক লাভ হচ্ছে। তিনি জানান, লোডশেডিংয়ের সূচি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোকানে থাকা প্রায় সব চার্জার ফ্যান বিক্রি হয়ে গেছে। বুধবার সকাল থেকে ফ্যান কিনতে আসছে, কিন্তু আমাদের স্টকে নেই।
এসএম ইলেকট্রিক দোকানের মো. আতা বলেন, ‘মানুষ চার্জার ফ্যান কেনার জন্য পাগল করে দিচ্ছে। দুই দিনে ফ্যান বিক্রি হয়েছে ছোট-বড় দিয়ে ৩০টির বেশি, যা এই গরমের সিজনে সর্বোচ্চ। লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর সবাই ব্যাটারিচালিত ফ্যান কিনতে আসছেন।’
পাইকারি বাজারে ফ্যানের দাম বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে বলে এখনও নিয়ে আসছি না। প্রতি ফ্যান ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা।’
মাগুরা শহরের শৌখিন ইলেকট্রিক, সাব্বির, আধুনিক, ওলি, আজিজসহ অন্তত ১৫টি ইলেকট্রিক দোকানের ব্যবসায়ীরা জানান, চার্জার ফ্যান ছোটগুলো ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। যাদের একটু সামর্থ্য আছে তারা বিভিন্ন ব্রান্ডের চার্জার ফ্যান ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনছেন।
ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সব দোকানে যা স্টকে ছিল তা ফুরিয়ে এসেছে। নতুন করে ঢাকা থেকে আনতে গেলে দাম বেশি চাইছে। এ জন্য দাম বেশি হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী নতুন করে মাল আনতে চাইবে না। কারণ সামনে শীতের আবহাওয়া আসছে। এমন চাহিদা তখন আর থাকবে না।’