বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উপহারের ঘরের সুফল পাচ্ছেন না জগরানীরা

  •    
  • ২১ জুলাই, ২০২২ ০৮:২৮

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর এক জায়গায় আর সংসারের আয়ের ক্ষেত্র অন্য জায়গায়। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় সংসার চালাতে তাই অনেকেই উপহারের ঘরে তালা মেরে অন্যত্র বাস করছেন। কারও কারও ঘরে বাস করছেন অন্য লোকও।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে ঝুলছে তালা। বরাদ্দপ্রাপ্ত পরিবারগুলোর উপস্থিতি দেখা যায়নি কোনো ঘরেই। মাঝে মাঝে তাদের কেউ এসে ঘর পরিষ্কার ও বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যাচ্ছেন শুধু। তবে কয়েকটি ঘরে মালিকদের ম্যানেজ করে বসবাস করছেন প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন কয়েকটি পরিবার।

এ অবস্থায় বরাদ্দ পেয়েও যারা ওই ঘরগুলোতে থাকছে না তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২) অধীনে ২০২০-২১ অর্থবছরে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ১২ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য আধাপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের পিপুলিয়ায় ১০টি এবং কাঞ্চনপুরের কুটিরহাটে ২টি ঘর নির্মিত হয়।

প্রতিটি ঘর তৈরিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দুই কক্ষের এসব ঘরে একটি করে রান্নাঘর ও টয়লেট রয়েছে। গত বছর উদ্বোধনের পর ঘরগুলো উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়।

সরেজমিনে বলড়া ইউনিয়নের পিপুলিয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, ১০টি ঘরের একটিতেও থাকছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। এসব ঘরের পাঁচটিতেই তালা ঝুলছে। বাকি পাঁচটিতে অন্যরা বাস করছে।

বরাদ্দপ্রাপ্ত হয়ে না থাকাদের মধ্যে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়নের ফৈজনগরের বাসিন্দা শেখ লুৎফর রহমান একজন।

সম্প্রতি তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চরে গরু-বাছুর আর ক্ষেত-খামার করে সংসার চালানো যায়। উপহারের ঘরে থাকলে চরে কাজ করা যায় না। ঘর পেলেই তো আর হবে না। সঙ্গে কাজও করতে হবে।’

বরাদ্দপ্রাপ্ত মনিন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘ঘরে থাকায় সমস্যা নাই। মাঝখানে কিছুদিন ছিলামও। কিন্তু ইনকাম সমস্যার কারণে ওই ঘরে থাকি না। চরে বাড়ি-ঘর, গরু আছে। সেখানেই থাকি। ক্ষেত-খামার আর ইনকাম করে ভালোই আছি।’

জগরানী নামে আরেকজন বলেন, ‘আমি গ্রাম পুলিশের চাকরি করি। আর আমার বাড়ি ধূলসুরা ইউনিয়নের আবিধারা গ্রামে। এ কারণে গঙ্গারামপুর এলাকায় আমার ডিউটি করতে হয়। গঙ্গারামপুর থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর অনেক দূর। যে বেতন পাই তাতে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করা সম্ভব নয়। তবে মাঝেমধ্যে গিয়ে সেই ঘরটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করি আর বিদ্যুৎ বিল দেই।’

কয়েকটি ঘরে মালিকদের ম্যানেজ করে বসবাস করছেন প্রকৃত ভূমিহীন কয়েকটি পরিবার। ছবি:নিউজবাংলা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বরাদ্দপ্রাপ্ত জানান, চরে থাকা তাদের বাড়ি-ঘর পদ্মায় ভেসে যেতে পারে- এই আশঙ্কায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতা-কর্মীদের ম্যানেজ করে তারা ঘর পেয়েছেন। কিন্তু এখনও তাদের আগের বাসস্থান ঠিক থাকায় অন্যদের থাকতে দিয়েছেন।

বরাদ্দপ্রাপ্ত না হয়েও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বসবাসকারী ইসমাইল হোসেন জানান, তার পৈতৃক বাড়ি পদ্মায় ভেসে গেছে। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় বরাদ্দপ্রাপ্ত একজনকে অনুরোধ করে তার উপহারের ঘরটিতে বাস করছেন।

ইসমাইলের মতো বরাদ্দ না পেয়েও উপহারের ঘরে বাস করছেন আব্দুল্লাহ নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এখানে ১০টি ঘরের পাঁচটিতেই তালা ঝুলছে। ঘরের আসল মালিককে রাজি করে বাকি পাঁচটি ঘরে আমরা বাস করছি। আমাদের জমি-জমা ও বাড়িঘর কিছুই নাই। সরকার যদি আমাদের একটা ঘর দিতেন। তাহলে সন্তানদের নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারতাম।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘর বরাদ্দ পেয়েও থাকে না- এমন তথ্য জানা নেই। যদি ঘরের মালিকরা না থাকে, তাহলে খোঁজখবর নিয়ে তাদের বাদ দিয়ে অন্যজনের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর