বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লোডশেডিং: দুশ্চিন্তায় নারায়ণগঞ্জের পোশাক ও রপ্তানিমুখী শিল্প

  •    
  • ২০ জুলাই, ২০২২ ২৩:৩৭

‘আমার কারখানায় এক ঘণ্টা জেনারেটর চালালে ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। এটি আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। আর যাদের বড় কারখানা, তাদের তো আরও বেশি খরচ। সুতরাং কারখানাগুলো বন্ধের পর লোডশেডিংয়ের সময় দেয়া হলে আমাদের জন্য কিছুটা ভালো হতো।’

জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেশে শিডিউল করে লোডশেডিংয়ে গিয়েছে সরকার। দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়ার কথা বলা হলেও জেলা-উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে এই সময় আরও বেশি।

লোডশেডিং দীর্ঘ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জের পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীমুখী শিল্পগুলো। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে গেলে শ্রমিকদের বেতনসহ নানা সংকটে পড়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেক পোশাক ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নারায়ণগঞ্জের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, ফতুল্লা বিসিক শিল্প নগরীতে ছোট বড় মিলিয়ে ৪ শতাধিক পোশাক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এ কারণে বেশিরভাগ কারখানায় ২৪ ঘণ্টা কাজ চলে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানায় একটানা কাজ চলে।

তার অভিযোগ, সে এলাকায় লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করা হলেও বিদ্যুৎ বিভাগ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করা হতো, তাহলে উৎপাদনে কোনো সমস্যায় পড়তেন না তারা। এখন দিনের বেলা লোডশেডিংয়ে কাজে বিঘ্ন ঘটছে। জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গেলে বেড়ে যাচ্ছে খরচ।’

আশিকুর রহমান জানান, বিসিক ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আছে আরও কয়েক শ হোসিয়ারি ও গার্মেন্ট। তাছাড়া আদমজী ইপিজেড এলাকার কারখনায়গুলোতেও লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। সব বিষয় মাথায় রেখে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

সিবি নীট ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানার পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিসিকে লোডশেডিং দেয়া হয়েছে দুপুর ৩টা থেকে ৪টা৷ ওই সময় শ্রমিকদের কাজের চাপ থাকে। কারণ দুপুরের বিরতির পর শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে আড়াইটা বেজে যায়। ৩টায় লোডশেডিং হলে অনেক সময় কাজ বন্ধ থাকবে। যদি কারখানা চালাতে চাই, তাহলে জেনারেটর চালাতে হবে।

‘আমার কারখানায় এক ঘণ্টা জেনারেটর চালালে ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। এটি আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। আর যাদের বড় কারখানা, তাদের তো আরও বেশি খরচ। সুতরাং কারখানাগুলো বন্ধের পর লোডশেডিংয়ের সময় দেয়া হলে আমাদের জন্য কিছুটা ভালো হতো।’

সজিব হোসিয়ারি কারখানার মালিক আব্দুল কাদির বলেন, ‘হোসিয়ারি কারখানাগুলো মূলত ছোট। আমাদের মেশিন চলে বিদ্যুতে। বিদ্যুৎ চলে গেলে অপারেটর, হেলপারসহ শ্রমিকরা বসে থাকে।

‘যে সময় লোডশেডিং হচ্ছে তখন আমাদের কাজ বন্ধ থাকছে। সময়মতো মাল ডেলিভারি দিতে না পারলে তো ক্রেতা মালপত্র নেবেন না। আমরা লোকসানে পড়ব। সরকার লোডশেডিং দিচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু এলাকা বুঝে দেয়া প্রয়োজন৷ যারা লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করেছেন তাদের সব বিষয়গুলো দেখা প্রয়োজন ছিল।’

পোশাক কারখানার মেশিন অপারেটর ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘যখন কারেন্ট থাকে না তখন কাজ থাকে না। কাজ কম হলে বিল কম আসবে। কারণ আমরা প্রোডাকশনে কাজ করি। আমার যারা বেতনে কাজ করে কারেন্ট আসলে তাদের কাজ দ্রুত করতে হয়। কারণ তাদেরও তো মালপত্র শিপমেন্ট করতে হইব।’

রাসেল নিটওয়্যার নামের আরেক কারখানার শ্রমিক রোকসানা আক্তার বলেন, ‘আমি ফিনিশিং বিভাগে কাম করি। আমাগো কাম হইলো প্যাকেটিং ও আয়রন করা৷ কারেন্ট না থাকলে তো কাম হয় না। বেশি কারেন্ট গেলে কারখানার জেনাররেট চালু করে। গার্মেন্টসের ভিতরে অনেক গরম।’

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে। আমরা সঠিক সময়ে শিপমেন্ট করতে পারব না। কারখানা চালাতে হলে বিদ্যুতের বিকল্প কিছু ব্যবহার করতে হবে, এতে খরচ বেশি। তাই শিল্প উদ্যোক্তাদের কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সময়ে মাল পাঠাতে না পারলে অর্ডার ক্যানসেল হয়ে যায়। এতে করে কারখানার বিপুল পরিমাণ লোকসান হয়। যার প্রভাব পড়ে শ্রমিকদের বেতনেও।’

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘যেসব এলাকায় পোশাক কারখানা আছে সেগুলোতে আমরা এলাকা ভাগ করে লোডশেডিংয়ের সময় দিয়েছি। নারায়ণগঞ্জকে চার ভাগে আলাদা ভাবে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশ এলাকাতে ১ ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হয়েছে। কিছু এলায় ২ ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেণ, ‘বিদ্যুৎ বিভ্রাট, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সামনে এ সময়ের পরিবর্তন হতে পারে। তা ছাড়া রাত ৮টার পর মার্কেটগুলো বন্ধ রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে। নির্দেশনা না মানলে তাদের সংযোগ বিচ্ছন্ন করা হবে।’

নারায়ণগঞ্জে কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং

ডিপিডি যে তালিকা দিয়েছে সেখানে পোশাক কারখানা এলাকাগুলোতে লোডশেডিংয়ের সময় উল্লেখ করা হয়েছে।

শীতলক্ষ্যা জোনের বিসিক শিল্প নগরীতে দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৪টা, ভোলাইল এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা৷

ফতুল্লা জোন সস্তাপুর এলাকায় দুপুর ১টা থেকে ২টা, শেহাচর ও লালখাঁ এলাকায় দুপুর ২টা থেকে ৩টা এবং অক্টো অফিস, মাসদাইরে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা।

নারায়ণগঞ্জ পূর্ব জোনের মিনা বাজার, টানবাজার ৫নং ঘাট, আল-জয়নাল প্লাজা এলাকায় ভোর ৪টা থেকে ৫টা ও সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা; শিবু মার্কেট, পিঠালীপুল ব্রিজ এলাকায় ভোর ৫টা থেকে ৬টা; ডিসির মাঠ ও ইউরো টেক্স গার্মেন্টস এলাকায় সকাল ৬টা থেকে ৭টা, পুরাতন হাজীগঞ্জ এলাকায় সকাল ৮টা থেকে ৯টা; ওয়াবদারপুল, লাকিবাজার এলাকায় সকাল ১০টা থেকে ১১টা; নিতাইগঞ্জ, বিকে রোড ও তোলারামের মোড় এলাকায় বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত।

নারায়ণগঞ্জ পশ্চিম জোনের সিদ্ধিরগঞ্জে ইপিজেড ও সাইলো এলাকায় বেলা ১১টা হতে ১২টা ও আদমজী ইপিজেড এলাকায় দুপুর ৩টা হতে বিকেল ৪টা।

একই ভাবে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজারের বিভিন্ন এলাকার। নির্ধারিত সময়ে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে।

এ বিভাগের আরো খবর