বগুড়া শহরের কলোনি এলাকায় সকাল ৮টা ৩২ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে ৯টা ৭ মিনিটে। অথচ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সময় দেয়া রয়েছে দুপুর ১টা থেকে বেলা ২টা। আরেকটি সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা।
এ অবস্থার কথা জানান এলাকার বাসিন্দা আফতারুন নাহার। তিনি বলেন, ‘নিয়ম তৈরির শুরুতেই গলদ দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কয়েকবার লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিবার ১০-১৫ মিনিট করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থেকেছে।’
এ অভিযোগ বগুড়ার সব এলাকায়। এলাকাভিত্তিক সময়সূচির বাইরেও লোডশেডিংয়ের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
সাম্প্রতিক চলা তাপদাহের মাঝে এমন লোডশেডিংয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছে বগুড়াবাসী। এর মধ্যে অনেক এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত লোডশেডিং পোহাতে হয়েছে মানুষদের।
শহরের নাটাইপাড়ার বাসিন্দা রেজওয়ানুল রুপম তার এলাকার মঙ্গলবারের লোডশেডিংয়ের ধারাপাত দেন।
তিনি জানান, দুপুর ১২টার দিকে লোডশেডিং হয়। ১ ঘণ্টা পর এসে আবার যায় ৩টার দিকে। ঘণ্টা দুয়েক বিদ্যুৎ থাকার পর ৭টার দিকে গিয়ে ১৫ মিনিট লোডশেডিং ছিল। এরপর একেবারে রাতে ১১টা থেকে ১২টা বিদ্যুৎ ছিল না। পরে রাত ২টার দিকে আবার যায়।
কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ার কারণে কখন বিদ্যুৎ আসে বলতে পারেননি রুপম। তবে জানান বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে ৯টা ৫০ মিনিটে। এরপর সূচি মোতাবেক সকাল ১০টার দিকে আবার লোডশেডিং শুরু হয়।
বিদ্যুতের সংকটে নাজেহাল খান্দার এলাকার টেলিকম ও ফটোস্ট্যাট ব্যবসায়ী কাওসার আহমেদ। বলেন, ‘সকাল থেকে দুবার লোডশেডিং হয়েছে। অথচ আমাদের এলাকায় দুপুর ১টা থেকে লোডশেডিং দেয়ার কথা।’
কাওসার বলেন, ‘এই লোডশেডিংয়ের কারণে আমার প্রচুর কাস্টমারকে ফেরত দিতে হয়েছে।’
লোডশেডিংয়ে আবাসিক জীবনের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব প্রকট হচ্ছে।
গুঞ্জন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘এখন আমাদের অটো রাইস মিলে ধান ভাঙা চলছে। মিলে একবারে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মণ ধান সেদ্ধ হয়। এ সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো ধানের মান নষ্ট হয়ে যাবে। মানে চাল ভেঙে খুদ হয়।
‘এ জন্য অবশ্য মিলে ব্যাকআপ হিসেবে জেনারেটর রাখা হয়। কিন্তু জেনারেটর যেভাবে চলছে, এতে আমাদের ব্যয় কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।‘
এলাকাভিত্তিক সময়সূচির বাইরেও লোডশেডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন উত্তরের এই জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণে সরকারি সংস্থা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের বিতরণ বিভাগ-২-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা যে বরাদ্দ পাচ্ছি সেই বরাদ্দে সব এলাকায় বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য রুটিনমাফিক ২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের বাইরেও গ্রাহকদের কষ্ট করতে হচ্ছে।’
পাওয়ার গ্রিড অফ বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোলাইমান বাদশা বলেন, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৩০ মেগাওয়াট। আজকে সরবরাহ হয়েছে ১০৭ মেগাওয়াট। মঙ্গলবার চাহিদা ১৪০ মেগাওয়াট। সরবরাহ ছিল ৮৭ মেগাওয়াট।’