বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লোডশেডিং: সূচিতে ৩-৪ ঘণ্টা, বাস্তবে ১২

  •    
  • ২০ জুলাই, ২০২২ ২০:৪৭

দিনে ১ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে সরকারের ঘোষণার বিপরীতে গিয়ে সিলেটে প্রথম দিনেই এলাকাভেদে ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করার সময় নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে এটিও মানা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহে লোডশেডিং করতে হচ্ছে দিনের অর্ধেক সময়।

সূচি অনুযায়ী সিলেটের জৈন্তাপুরে লোডশেডিং থাকার কথা ৪ ঘণ্টা। কিন্তু মঙ্গলবার ১১-১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার চিকনাগুল এলাকার বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমি একটি ধান ভাঙার কল চালাই। লোডশেডিংয়ের শিডিউল দেখে আমি মিল খোলা রেখেছিলাম। কিন্তু শিডিউলের কোনো তোয়াক্কাই করছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।’

এমন অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার সকালে আমাদের চাহিদা ছিল ৭২ মেগাওয়াট। সরবরাহ পেয়েছি ৩৮ মেগাওয়াটের মতো। ফলে অর্ধেকের মতো সরবরাহ পাচ্ছি। এমন হলে তো ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম পাওয়ায় শিডিউলও হেরফের করতে হচ্ছে। দিনে ৮-৯ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সময়সূচি নির্ধারণ করে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দিনে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকার কথা না। কিন্তু ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তথ্য বলছে, কোথাও ছয় থেকে সাতবার, কোথাও বা তার চেয়ে বেশিবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে।

মফস্বল শহরের তুলনায় গ্রামের পরিস্থিতি আরও খারাপ। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের বারবার যাওয়া-আসায় জনগণের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘লোড একটু বেশি হয়ে গেলেই গ্রিড লাইন থেকে ফোন করে লোড কমাতে বলে। তাদের কথামতো সঙ্গে সঙ্গে না কমালে আমাদের পুরো সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। ফলে আমরাও অসহায় আসলে। জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে বুঝতে পারছি, কিন্তু কিছু করতে পারছি না।’

এই চিত্র পুরো সিলেটের। প্রথম দিন থেকেই মানা হচ্ছে না এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সূচি।

সরকারের ঘোষণার বিপরীতে গিয়ে সিলেটে প্রথম দিনেই এলাকাভেদে ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করার সময় নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে এটিও মানা সম্ভব হচ্ছে না।

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অষ্টগ্রাম এলাকার সায়মা এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে বলে, ‘সন্ধ্যা হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত থাকে না। একে তো বিদ্যুৎহীনতা, তার ওপর তীব্র গরমের কারণে রাতে একেবারে পড়াশোনা করা যায় না।’

‘বন্যার কারণে অনেক দিন পড়ালেখা করতে পারিনি। এখন পানি কমলেও লোডশেডিংয়ের কারণে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে’- এসএসসির ফলাফল নিয়ে চিন্তিত সায়মার আক্ষেপ ঝরে পড়ে।

নগরের উপশহর এলাকার গৃহিণী নাজমা বেগম বলেন, ‘আমাদের এখন তিন ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি, গরম আর বিদ্যুৎ। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে যায়। গরম তো সব সময় আছেই। আর দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে ঘরে টেকাও দায়।’

এই পরিস্থিতিতে সিলেটে বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে একাধিকবার। সোমবার রাতেও সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ওসমানীনগর এলাকার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা।

ওই উপজেলার সাদিপুর এলাকার গ্রাহক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুতের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। কোনো শিডিউলই মানা হচ্ছে না।’

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক সঞ্জীব কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাহিদার ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাচ্ছি। বিশেষত পিক আওয়ারে সরবরাহ সবচেয়ে কম মিলছে।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমাদের চাহিদা ছিল ৮৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ পেয়েছি মাত্র ৩০ মেগাওয়াট। বুধবার সকালে চাহিদা ছিল ২৫ মেগাওয়াট। পেয়েছি ১৫-১৬ মেগাওয়াট।’

সময়সূচি মানতে না পারার কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদিরও। তিনি বলেন, ‘আমাদের চাহিদার ৭০ শতাংশ সরবরাহ ধরে শিডিউল করতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমরা এলাকাভেদে ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং রেখে শিডিউল করেছিলাম। কিন্তু এখন অর্ধেক সরবরাহই পাচ্ছি না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিডিউল মানতে পারছি না।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫৬ মেগাওয়াট, কিন্তু পেয়েছি ৭৮ মেগাওয়াট। অন্যদিকে বিভাগে চাহিদা ২২৬ মেগাওয়াটের বিপরীতে পেয়েছি ১১৪ মেগাওয়াট। ফলে ৫০ শতাংশ লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর