গ্যাস সংকটের কারণে ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিকল্প উৎস খোঁজার কথা জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বুধবার সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড সচিবালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপরই মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এ কথা জানান।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরিয়ায় একটু শঙ্কিত, গ্যাসের জন্য স্থানীয় উৎপাদনটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু আমরা এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। উৎপাদন বন্ধ থাকলে আমাদের বিকল্প উৎস থেকে ইউরিয়া আনতে হবে। আমাদের খরচটা সে ক্ষেত্রে বেশি হবে।’
অবশ্য বেশ কিছু সার মজুত থাকায় খুব একটা চিন্তা নেই বলেও জানান তিনি। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যে স্টক আছে তাতে এখনও সংকটের কথা চিন্তা করছি না। ইউরিয়ার জন্য এখন আমাদের দৌড়াতে হবে। ইউরিয়ার সুবিধা হলো, এটা অনেক দেশই উৎপাদন করে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিকল্প উৎস থেকে আনার চেষ্টা করছি, যাতে যমুনা ফার্টিলাইজার ও চট্টগ্রাম ফার্টিলাইজার দুটোকেই ফাংশনাল করা যায়। এটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। যদি গ্যাস না দেয় তাহলে কি হবে? বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে আমরা বলি যে শিল্প কারখানায় তো দিতেই হবে।
‘এমনি আমাদের ব্যবহারের জন্য সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সার কারখানা বন্ধ হলে… সারটা কিসে লাগছে? খাদ্য উৎপাদনে। তখন আমরা খাদ্য কোথায় পাবো? এতে বিরাট ক্ষতি হবে। মূল্যটা আমাদের অনেক বেশি দিতে হবে।’
গ্যাস সংকটের কারণে মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে রাষ্ট্রায়াত্ত ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট কাটলে উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে। কবে থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত তরে বলতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
কারখানাটিতে সার উৎপাদন শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। দৈনিক ১ হাজার ৭০০ টন ইউরিয়া ও ১ হাজার টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সিইউএফএলে কাজ করেন অন্তত ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত এই সার কারখানা বন্ধ থাকলে প্রতিদিন সরকারের দুই কোটি টাকা লোকসান হয় বলে জানা গেছে।
আগামী বোরো মৌসুমের জন্য দেশে পর্যাপ্ত সার মজুত থাকার দাবি করেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘সারের সংকট হবে না। সংকট হবে না এ জন্য আমাদের কয়েকটা দেশের সাথে, সৌদি আরব, কাতার এদের সাথে ভালো এগ্রিমেন্ট আছে। টাকা পয়সার ক্ষতি হবে। আমরা লোকালি যে ইউরিয়া তৈরি করি, এটার দাম ১৯ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে এটার দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তাহলে আমরা সরকারকে এখনও ১৬ টাকায় ইউরিয়া দিচ্ছি। পৃথিবীর কোনো দেশই এটা দিতে পারবে না। ভারত তো পারেই না।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পটাশিয়াম, ফসফসার, বিওপি আগামী বোরো মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত মজুত করেছি। কোনো সমস্যা নেই।’
রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় তাদের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা করে না জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রাশিয়ার উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা ভারত ভায়োলেট করতে পারে। তারা এগুলো কেয়ার করে না। কিন্তু আমাদের গার্মেন্টসের একটি বড় অংশ যায় আমেরিকায়।
‘কালকেই তো আমাদের উপর একটা ইয়ে দিয়ে দেবে। আমরা কি সেটা টলারেট করতে পারব? আমাদের তো সেই ইয়ে নাই। এটা বাস্তবতা। আপনাকে তো ডিপ্লোম্যাটিক হতে হবে। সার বা তেলের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত না।’