ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় স্বামী-স্ত্রী ও তাদের মেয়েকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার চালক রাজু আহমেদ শিপনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম ৩ নম্বর আমলি আদালতে বুধবার বেলা ২টার দিকে শিপনকে পাঠানো হয়েছে।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেকান্দার।
তিনি বলেন, ‘র্যাব মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিপনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছি। তবে তাকে রিমান্ডে নিতে পারলে আরও অনেক কিছু জানা যাবে।’
ঢাকার সাভার এলাকা থেকে সোমবার রাতে শিপনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারের পর শিপন বলেছেন, দুর্ঘটনার সময় তার সহকারী ঘুমাচ্ছিলেন। টানা ট্রাক চালানোর কারণে তিনিও ছিলেন ক্লান্ত। একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও জানান, গত ১১ জুলাই থেকে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিলেন শিপন। এর মধ্যে তিনি একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মালামাল আনলোড করে পুনরায় রাজশাহী যান।
১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে আম নিয়ে এবং পরবর্তী সময় রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য রাত ১২টার সময় রওনা করেন। পথে শিপন হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না বেগম ও মেয়ে সানজিদা আক্তারকে চাপা দেন। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান জাহাঙ্গীর। মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা রত্নার পেট চিড়ে বেরিয়ে আসে কন্যাশিশু।
এ সময় স্থানীয়রা নিহত দম্পতির আহত সন্তান সানজিদা ও সদ্যোজাত কন্যাকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সানজিদারও মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশুটির ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে গেলেও সে বেঁচে আছে।
দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে শিপন ঢাকাগামী একটি বাসে ওঠেন। পরবর্তী সময় বাস থেকে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামেন এবং সেখান থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে অন্য একটি বাসে করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছান। সেখান থেকে তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাকচালকের গাড়িতে উঠে আত্মগোপনে থাকেন।