মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে বুধবার দুপুরে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘একটি ছেলের ফেসবুকের পোস্ট দেখে ইমোশনাল হয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে সব ধর্মের প্রাধান্য রয়েছে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সবাইকে নিয়ে আমাদের দেশ। আমরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত ইমোশনাল। মাঝে মাঝে যেকোনোভাবেই দুই-একটি উক্তি চলে আসে এবং এগুলো পুঁজি করে ইমোশনালভাবে কিছু ঘটনা ঘটে যায়। আর ইমোশন কাজে লাগিয়ে একটি গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
‘নড়াইলসহ এর আগেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। সবগুলো ঘটনাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎক্ষণাৎ অ্যাপ্রোচ করেছে। নড়াইলের ঘটনা যখনই ঘটেছে, তখনই ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ছেলেটির বাড়ি প্রটেকশনে ছিল এবং তাকে খোঁজা হচ্ছিল, কিন্তু ছেলেটির ফেসবুকের পোস্ট দেখে একটি গোষ্ঠী ইমোশনাল হয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।’
আবেগ কাজে লাগিয়ে যারা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা সব জায়গাতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটিয়েছে একটি ছেলে। এতে তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেটির বাড়ি প্রটেকশন দেয় এবং যারা যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে। তাদের ধরা হয়েছে।
‘নড়াইলের ঘটনায় সবগুলো বিষয় সামনে রেখে ইনভেস্টিগেশন চলছে। কে কতখানি সম্পৃক্ত ছিল, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
প্রেক্ষাপট
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ফেসবুক পোস্টে এক কলেজছাত্রের আইডি থেকে বৃহস্পতিবার কটূক্তিমূলক কমেন্ট করার অভিযোগ ওঠে। এর জেরে শুক্রবার বিকেলে হামলা চালানো হয় নড়াইলের লোহাগড়ার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায়।
হামলাকারীরা গোবিন্দ সাহা ও দিলীপ সাহার বাড়ি, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবার দোকানসহ ১০টির বেশি বাড়ি-দোকান ভাঙচুর করে। একটি বাড়িতে আগুনও দেয়া হয়।
বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি সাহাপাড়া মন্দিরের প্রতিমা, চেয়ার ও সাউন্ড বক্স ভাঙচুর করে।
হামলার ঘটনায় লোহাগড়া থানার এসআই মাকরুফ রহমান রোববার রাতে মামলা করেন। তাতে ২০০ থেকে ২৫০ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর বলেন, ‘ঘটনার দিন জনরোষ সৃষ্টি ও হামলার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। তখন বোঝা যাবে তাদের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল।’
এ হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। ১৬ জুলাই রাতে দিঘলিয়া গ্রামের সালাহউদ্দীন কচি অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।