রাজশাহীর বাগমারায় বিয়ের আট মাসের মাথায় ১৬ বছর বয়সী এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম হোসনে আরা খাতুন।
নিহতের বাবা আব্দুল মালেক দাবি করেছেন, ঈদের আগে জামাতা তার কাছে একটি মোবাইল চেয়েছিলেন। সেটি দিতে না পারায় মেয়ের উপর অত্যাচার করতেন তার স্বামী।
সোমবার হোসনে আরার মাকে তার স্বামী ফোন করে মারপিটের শব্দ শুনিয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরই তারা জানতে পারেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে জামাতা, মেয়ের শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন হোসনে আরার বাবা।
১৬ বছর বয়সী নিহত হোসনে আরা উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ভ্যানচালক আবদুল মালেকের মেয়ে। প্রায় আট মাস আগে পাশের বীরকুৎসা গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে রানার সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
হোসনে আরার বাবা আবদুল মালেক বলেন, ‘ঈদের আগে মেয়ের জামাই একটি স্মার্টফোন চেয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে টাকা ছিল না। সেজন্য দিতে পারিনি। আমি মেয়েকে বলেছিলাম, কিছুদিন আগেই তো ১৭ হাজার টাকা দিয়ে ভ্যান কিনে দিলাম। এখন আবার টাকা পাবো কোথা থেকে। কিন্তু এ নিয়ে মেয়েটাকে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করতো।’
মালেক জানান, সোমবার হোসনে আরার টিটেনাসের টিকা দেয়ার দিন ছিল। এ জন্য তার মা আমেনা বেগম মেয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন হোসনে আরাকে বাবার বাড়িতে আসতে দেয়নি।
মা চলে আসার পর হোসনে আরা বাবাকে ফোন করে কান্নাকাটি করেছিল। সে বাবাকে একবার দেখা করার জন্যও বলেছিল।
আবদুল মালেক আরও জানান, তিনি সোমবার বিকেলে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যেতেও চেয়েছিলেন। এরই মাঝে দুপুরে জামাতার নম্বর থেকে মেয়ের মাকে ফোন করা হয়। এ সময় মেয়েকে মারপিট করার শব্দ শোনা গেছে। জামাতা চিৎকার করছিলেন আর মারছিলেন।
বিকেলে পাশের গ্রামের একজন জানান, হোসনে আরা আত্মহত্যা করেছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে আব্দুল মালেক দেখতে পান বাড়ির বারান্দায় মেয়ের মরদেহ পড়ে আছে। এ সময় আশপাশের মানুষ মরদেহের পাশে থাকলেও স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি ছিলেন না।
মালেক বলেন, ‘গ্রামের লোকজন বলেছে, মেয়ে নাকি গলায় কাপড় দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
বিকেলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। রাতে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাবার সময় বাধে বিড়ম্বনা। মরহেদ নিয়ে যাবার জন্য এলাকায় কোনো ভ্যান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ সময় মালেক নিজেই মেয়ের মরদেহ ভ্যানে করে বাগমারা থানায় নিয়ে যান।
বাগমারা থানার পরিদর্শক তৌহিদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলায় ওই গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করা হয়।
যোগিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান বলেন, ঘটনাটা আমার গ্রামেরই। আমরা মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নই। জানতে পেরেছি, সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বাড়িতে গলাই কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে হোসনে আরা। বাড়ির লোকজনই তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামায়। নামানোর পরও নাকি নিশ্বাস ছিল, এর পরপরই সে মারা যায়। ঘটনার পরই তার স্বামীসহ শ্বশুর-শাশুড়ি পালিয়ে যায়।’