ভোটে কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে তাকে মোকাবিলায় রাইফেল নিয়ে আসার কথা বলে সমালোচনার মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবার গণমাধ্যমের সামনে আসবেন কি না, সেটি নিয়ে ভাবছেন।
সিইসির দাবি, তিনি রসিকতা করতে গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি গণমাধ্যমে ভিন্নভাবে আসার কারণে তিনি বিব্রত হয়েছেন।আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গত রোববার থেকে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ শুরু হয়েছে তাতে সিইসির এই তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে বক্তব্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে।
সিইসি নিজেও এই বিষয়টি নিয়ে বারবার বক্তব্য রেখেছেন। প্রথম দিন এই কথা বললেও সেদিনই পরে উল্টো কথা বলেছেন। এর পরদিন আবার বলেছেন, তিনি রসিকতা করেছেন। তৃতীয় দিন মঙ্গলবার এসে বলেছেন, মিডিয়ায় তার বক্তব্যের উপস্থাপনা ঠিক হয়নি। পরে আবার এই কথা বলায় ক্ষমাও চেয়েছেন।
এদিন সিইসি প্রথমে কথা বলেন ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপের সময়। সেখানে তিনি গণমাধ্যমের ওপর হতাশা প্রকাশ করে পরে ক্ষমা চান।
সেই বক্তব্যে গণমাধ্যমের প্রতি উষ্মা প্রকাশ পেলেও ক্ষোভ পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সংলাপের সময় গণমাধ্যমের প্রতি সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দাবি করেন, তার বক্তব্য বিকৃতভাবে এসেছে। তাই এখন থেকে গণমাধ্যমের সামনে কতটা খোলামেলা হবেন, সেটি নিয়ে ভাববেন।
গত ১৭ জুলাই জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপকালে তিনি সব দলকে ভোটের মাঠে অটল থাকার পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেছিলেন- ‘মাঠে কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’সিইসি বলেন, ‘যেভাবে বক্তব্যটা পত্রপত্রিকায় উপস্থাপিত হয়েছে এটা কখনেও বক্তব্য হতে পারে না। আমরা সময় সময় হাস্যরস করি আপনারাও করেন। এ জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি।‘এটা যদি কখনও সিইসি মনে করেন সবার অস্ত্র নিয়ে আসা উচিত, তাহলে চার মাস আগে থেকেই ক্রমাগতভাবে বলে যেতাম আপনাদের যার যা আছে- অস্ত্র, তীর-ধনুক, রাইফেল, বোম; এগুলো নিয়ে আসবেন।‘এটা কথার পিঠে কথা হাস্যরসের সঙ্গে বলা হয়েছিল। এটা আপনারা সহনশীলতার সঙ্গে দেখবেন, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’
গণমাধ্যমের জন্য নিজের দুয়ার আগের মতো খোলা থাকবে কি না সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টিও উঠে আসে সিইসির বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ সুযোগ মিডিয়াকে দিয়েছি। আমি আগে মিনিস্ট্রিতে সচিব ছিলাম। মিটিং কখনও ওপেন করা হয় না। মিটিং অলওয়েজ কনফিডেনশিয়াল। তারপর একজন মুখপাত্র অবহিত করেন। কিন্তু কোনো একটা সময় এটা চালু হয়েছে এখানে। আমরা আর এটাকে বন্ধ করিনি। সকলেই শুনতে পারেন, যে স্বচ্ছতাটা আমরা ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।‘কিন্তু যেভাবে আমাদের বক্তব্য বিকৃত হচ্ছে এবং মানসম্মান যেভাবে বিকিয়ে যাচ্ছে, এটা নিয়েও আমাদের এখন চিন্তাভাবনা করতে হবে, যে আমরা কতটা ওপেন হব। আর সকলের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, যে আমাদের মিডিয়ার ভাইয়েরা যারা আছেন, তারা যেন আমাদের বক্তব্যটাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন। কারণ পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, নির্বাচন কমিশনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সংলাপ নিয়ে তা মতামত পর্যালোচনা করব কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। আর কোন কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বা আমাদের কর্মপরিধির মধ্যে সেগুলো পড়ে কি না, সেগুলো আমরা সংলাপ শেষে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।’রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ওপরও জোর দেন সিইসি। বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মোটাদাগে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেন যে কেউ সহিংসতা করব না, শান্তিপূর্ণভাবে করব। কেউ সহিংসতা করলে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করব।’