মেয়াদের শেষ সময়ে এসে বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে। মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত আরও ১.১৬ কিলোমিটার যোগ হয়ে এখন লাইনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। বাড়তি ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার লাইনসহ অন্যান্য কাজ যোগ হওয়ায় এই প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে, যাতায়াতে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ কমাতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হবে মেট্রোরেল। চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় ১৫ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি প্রকল্প অনুমোদন হয়।
একনেক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে। প্রতিটি ল্যান্ডিং স্টেশনে পার্কিং স্পেস করতে বলেছেন। এয়ারপোর্ট থেকে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন পর্যন্ত আন্ডারপাস করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। পাশাপাশি সময় বাড়বে দেড় বছর।
২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া মেট্রোরেল লাইন-৬-এর মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এতে অর্থায়ন করে উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। শুরুতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের কথা ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত আরও ১.১৬ কিলোমিটার যোগ হয়ে লাইনের দৈর্ঘ্য হয় ২১.২৬ কিলোমিটার। নতুন কাজের কারণে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
উত্তরা থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেলের কাজ শেষ হতে আরও অন্তত দেড় বছর সময় বেশি লাগবে। একই সঙ্গে ব্যয় বাড়ছে ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (লাইন ৬) প্রকল্পে নির্মাণকাজের জন্য বাড়তি সময় ও অর্থ চেয়ে দ্বিতীয় দফা সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।
মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত নেয়ায় প্রকল্পের কাজ বেড়ে গেছে।
মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার ধরে মেট্রোরেলের রুট দাঁড়াচ্ছে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। কাজ বাড়ার কারণে বাড়ছে ব্যয়ও।
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের কাজ প্রায় শেষ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এ অংশে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করা হবে। কাজ চলছে প্রকল্পের বাকি অংশেও।
প্রস্তাব অনুমোদনের ফলে প্রকল্পের মোট সময় লাগবে ১৩ বছর।
২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে আগামী ২০২৪ সালের জুনে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে।
প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হবে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে মূল প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
মেট্রোরেল সরকারের একটি ফার্স্ট ট্র্যাক বা অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমডি) সূত্রে জানা গেছে, গত জুন পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। তবে আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ৯০ শতাংশ।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর আগ পর্যন্ত ব্যয় ১৮ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে মেট্রোরেলের বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রয়েছে ২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া অন্য সাত প্রকল্প হলো - সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প যথাক্রমে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়কের হাটহাজারী হতে রাউজান পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণ, নরসিংদী সড়ক বিভাগের আওতায় ইটাখোলা-মঠখোলা-কটিয়াদী সড়ক ও নয়াপাড়া-আড়াইহাজার নরসিংদী-রায়পুরা দুটি আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য ধনুয়া হতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ’ প্রকল্প।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি’ প্রকল্প।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদীভাঙন হতে সংরক্ষণ’ প্রকল্প;
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ‘বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প।