বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চুক্তিনামায় সই করে সভাপতির ‘টাকা গ্রহণ’, নিয়োগ স্থগিত

  •    
  • ১৯ জুলাই, ২০২২ ১২:০২

বাগেরহাট সদর ইউএনও মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি, অধ্যক্ষ ও নিয়োগ প্রত্যাশীদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। ১৯ জুলাই উভয় পক্ষের শুনানির মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত করা হবে।’

বাগেরহাট সদর উপজেলার একটি মাদ্রাসায় বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়ার শর্তে সভাপতির বিরুদ্ধে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

খানপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার এ ঘটনা জানাজানি হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।

ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে গত শনিবার দুপুরে লিখিত পরীক্ষার পর প্রক্রিয়া স্থগিত করেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক মো. শহিদ লতিফ।

টাকা নেয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আবুল কাশেম তরফদারের প্রত্যাহার ও বিচার দাবি করেছেন নিয়োগ প্রত্যাশী ও স্থানীয়রা।

মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী, আয়া ও নিরাপত্তা প্রহরীর পদ শূন্য ছিল। সম্প্রতি ওই ৫টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ।

৫টি পদের বিপরীতে ৭২ জন প্রার্থী আবেদন করেন। সব প্রক্রিয়া শেষে রোববার সকাল থেকেই রামপাল উপজেলার শারাফপুর আলিয়া মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষা চলছিল। এ সময় টাকা দেয়া প্রার্থীদের অভিভাবকরা মাদ্রাসার সামনে জড় হন। নিজেদের প্রার্থীদের চাকরি পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় তারা হট্টগোল করতে থাকেন।

একপর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সম্মানিত ব্যক্তিরা বিষয়টি জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক মো. শহিদ লতিফকে জানান।

স্ট্যাম্পে চুক্তি করে মাদ্রাসার সভাপতি আবুল কাশেম তরফদারকে টাকা দেয়া কৃষক মীর মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে মীর মুকিত মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণির (নিরাপত্তা প্রহরী) নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিল। চাকরি নিশ্চিত হতে সভাপতি আবুল কাশেমকে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পের চুক্তির মাধ্যমে দুই ধাপে এক লাখ টাকা দিই।

‘কিন্তু নিয়োগের দিন দেখি আরও অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়েছেন সভাপতি আবুল কাশেম তরফদার। ঘরের গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েছি, ওর চাকরি না হলে আমরা কী খাব।’

শুধু মীর মুকিতই নন, অন্তত ১৭ জন প্রার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়েছেন সভাপতি- এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হয়- এটা সবাই জানি। কিন্তু মাদ্রাসার সভাপতি আবুল কাশেম তরফদার ও স্থানীয় চেয়ারম্যান ফকির রহমউদ্দিনের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা হওয়ায় নিয়োগ স্থগিতের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

খানপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর (দক্ষিণ খানপুর) ওয়ার্ডের সদস্য কামাল তরফদার জানান, বাগেরহাট সদর উপজেলার মাদ্রাসার নিয়োগ পরীক্ষা রামপাল উপজেলার মধ্যে নেয়া হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, এই নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। শুধু মীর মোশারফের ছেলে নন, আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সভাপতি। এর আগেও কয়েকজনের কাছ থেকে নিয়োগের কথা বলে টাকা নিয়েছেন তিনি।

তবে সভাপতি আবুল কাশেম তরফদার বলেন, ‘চুক্তি করে শুধু একজনের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। চাকরি না হলে আমরা টাকা ফেরত দেব। যেহেতু নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছে, তাই এখন অপেক্ষা করতে হবে।’

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা করেছিলাম। এখানে আমি কোনো অপরাধ বা অনিয়ম করিনি। কেউ টাকা নিয়ে থাকলে সে দায়ভার তার নিজের নিতে হবে।’

অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক মো. শহিদ লতিফ বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে উপজেলা প্রশাসন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।’

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি, অধ্যক্ষ ও নিয়োগ প্রত্যাশীদের নোটিশ দেয়া হয়েছে।

‘১৯ জুলাই মঙ্গলবার উভয় পক্ষের শুনানির মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হবে। এরপর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর