বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পেট ফেটে জন্ম শিশুর: সেই ট্রাকচালক গ্রেপ্তার

  •    
  • ১৯ জুলাই, ২০২২ ১০:৪৭

ময়মনসিংহের ত্রিশালে যে ট্রাকচাপায় শিশুসন্তানসহ এক দম্পতি নিহত হয়েছিলেন, মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মায়ের পেট ফেটে বেরিয়ে এসেছিল এক শিশু; সেই ট্রাকের চালক রাজু আহমেদ শিপনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

ঢাকার সাভার এলাকা থেকে সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১৪ ময়মনসিংহ সদর দপ্তরের কোম্পানি অধিনায়ক মেজর আখের মুহম্মদ জয়।

তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। ঘটনার পর থেকেই র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা নজরদারি বাড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় রাতে ঢাকার সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রাকচালক শিপনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের একটি অভিযাত্রিক দল।

‘মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।’

এর আগে শনিবার বিকেলে তিনজনকে চাপা দেয়ার ঘটনায় পুলিশ ট্রাকটিকে জব্দ করতে পারলেও তাৎক্ষণিক পালিয়ে যান চালক। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা অজ্ঞাত আসামি করে মামলার পর পুলিশ চালককে খুঁজলেও তার পরিচয় মিলছিল না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেকান্দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিশুসহ তার বাবা-মা নিহতের পর থেকেই চালককে শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। মামলার পর থেকে চালককে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মাঠে কাজ করে। তবে রাতেই র‌্যাব চালককে গ্রেপ্তার করে। যদিও তার সম্পূর্ণ পরিচয় এখনও জানতে পারিনি।’

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ট্রাকচালকের নাম শিপন। ৪৩ বছর বয়সী শিপন রাজশাহীর বাঘা থানার বাসিন্দা।

চালকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনার পরপরই শিপন তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে গা ঢাকা দেন তিনি। তাই তার সঙ্গে আর কারও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

সোমবার রাতে ট্রাকমালিক মঞ্জুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তার বাড়িও বাঘা থানায়।

তিনি বলেন, ‘ট্রাকে চালক ও হেলপার দুজনই ছিল৷ রাজশাহী থেকে মাল বোঝাই করে ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিল ট্রাকটি। শনিবার ত্রিশালে শিশুসহ তিনজন নিহত হওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে নিশ্চিত হয়েছি ট্রাকটি আমার।

‘এরপর চালকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে প্রতিদিন কল করা হলেও নম্বর বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করতে পারিনি।’

মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘চালককে সংশ্লিষ্ট থানায় আত্মসমর্পণ করাতে তার পরিবারের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু চালক কোথায় আছে নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারেনি। তারা জানান, আইনগতভাবে চালকের কঠিন শাস্তি হবে- এমন ধারণা থেকেই তিনি পালান।

চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির আপডেট কাগজপত্র ছিল কি না জানতে চাইলে মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘অন্তত ১০ বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন ওই চালক। তিনি গাড়ি চালানোতে দক্ষ। হেলপারও সম্প্রতি টাকা দিয়ে সহযোগী চালকের কার্ড সংগ্রহ করেন। ত্রিশালে এ ঘটনার আগে চালক কখনও কাউকে চাপা দেননি।’

মঞ্জুর রহমানের রয়েছে চারটি ট্রাক। এর মধ্যে তিনটি কিনেছেন কিস্তিতে। তিনজনকে চাপা দেয়া ট্রাকটি কিস্তিতে দুই বছর আগে কিনেছিলেন। সম্প্রতি কিস্তি সম্পূর্ণ পরিশোধ হলেও হঠাৎ এমন দুর্ঘটনায় পড়ল। এখন মামলা কতদূর গড়াবে এবং এটি কিভাবে সমাধান হবে, সেটাই ভাবছেন তিনি।

বেঁচে থাকা নবজাতক ও অন্য দুই ভাই-বোনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিহতদের জীবন তো আর ফিরিয়ে দিতে পারব না। তাই আপস-মীমাংসা হওয়াই ভালো। কারণ বেঁচে থাকা নবজাতকসহ তার ভাই-বোনের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী আমি অর্থ দিলে তা দিয়ে তারা অনেকটাই ভালো থাকতে পারবে। তবে টাকার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হলে দিতে পারব না।

‘পরিবারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হলেই সবচেয়ে ভালো হবে। আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে অবশ্যই নবজাতকের বাড়িতে যাব তাদের দেখতে।’

নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করেছি। গ্রেপ্তার চালকের কঠিন শাস্তি হবে- এমনই আশা করি।’

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় গত শনিবার ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান উপজেলার রায়মনি এলাকার ৪২ বছরের জাহাঙ্গীর আলম, তার ৩২ বছর বয়সী স্ত্রী রত্না বেগম ও তাদের ৬ বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার।

ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল আমিন স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগতির ট্রাকটি ময়মনসিংহের দিকে আসছিল। বেলা সোয়া ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্ট বিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত আসতেই সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই দম্পতিসহ তাদের কন্যাশিশুকে চাপা দেয় ট্রাকটি।

এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী নিহত হন। আর মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট চিড়ে বেরিয়ে আসে তার গর্ভে থাকা কন্যাশিশু।

এ সময় স্থানীয়রা নিহত দম্পতির আহত সন্তান সানজিদা ও সদ্যোজাত কন্যাকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সানজিদারও মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশুটির ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে গেলেও সে বেঁচে আছে। ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবীব নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শিশুটি চিকিৎসাধীন।

এদিকে সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকের নির্দেশে ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সোনালী ব্যাংকের ত্রিশাল শাখায় নবজাতক কন্যাসহ তার দুই ভাই-বোন ৮ বছরের এবাদত ও ১০ বছরের জান্নাতকে সহায়তার জন্য একটি যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন শিশুদের দেখভাল করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সহায়তায় তাদের দাদি সুফিয়া আক্তারের জন্য একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে শিশুদের জন্য ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর