বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই নবজাতক ও তার ভাই-বোনের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

  •    
  • ১৮ জুলাই, ২০২২ ২৩:২৩

শিশুদের দাদি সুফিয়া বেগম বলেন, ‘এখন বেঁচে থাকা নবজাতকের জন্য সবাই অর্থ সহায়তা দিলেও এতিম অন্য দুই নাতি-নাতনির লালনপালন ও পড়াশোনা করাবো কীভাবে সে চিন্তাই করছি।’

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মা-বাবা-বোনহারা নবজাতক ও তার অন্য দুই ভাই-বোনের জন্য যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে জেলা প্রশাসন। এতিম শিশুদের জন্য আসা অর্থ সহায়তার ব্যবস্থাপনা করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ এনামুল হকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সোমবার বিকেলে সোনালী ব্যাংকের ত্রিশাল শাখায় অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান।

তিনি জানান, ‘রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক ও অপর দুই সন্তানের সহায়তা হিসাব’- নামে সোনালী ব্যাংকের ত্রিশাল শাখায় সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে। যার নম্বর ‘৩৩২৪১০১০২৮৭২৮’। নবজাতক ও তার দুই ভাই-বোন নাবালক হওয়ায় তাদের দাদা এবং ইউএনওর যৌথ স্বাক্ষরে অ্যাকাউন্টটি পরিচালিত হবে। যে কোনো ব্যক্তি ওই অ্যাকাউন্টে অর্থ সহায়তা পাঠাতে পারবেন।

ইউএনও আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘শিশুদের দেখভাল করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সহায়তায় তাদের দাদি সুফিয়া আক্তারের জন্য একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শিশুদের জন্য ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নবজাতকসহ ওই দুই শিশুদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হবে। আমরা চাই, দাদা-দাদিকে নিয়ে শিশুরা সবসময় ভালো থাকুক।’

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় শনিবার ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান উপজেলার রায়মনি এলাকার ৪২ বছরের জাহাঙ্গীর আলম, তার ৩২ বছর বয়সী স্ত্রী রত্না বেগম ও তাদের ৬ বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার।

ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল আমিন স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগতির ট্রাকটি ময়মনসিংহের দিকে আসছিল। বেলা সোয়া ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্ট বিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত আসতেই সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই দম্পতিসহ তাদের কন্যাশিশুকে চাপা দেয় ট্রাকটি। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী নিহত হন। আর মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট চিড়ে বেরিয়ে আসে তার গর্ভে থাকা কন্যাশিশু।

এ সময় স্থানীয়রা নিহত দম্পতির আহত সন্তান সানজিদা ও নবজাতকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার আগেই সানজিদার মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশুটির ডান হাতটি ভেঙে গেলেও বেঁচে যায় সে।

এ ঘটনা সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নবজাতককে দত্তক নিতে শতাধিক মানুষ যোগাযোগ করছে বলে জানান ডিসি এনামুল।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নবজাতককে দত্তক নিতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটসহ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) নানা শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ আমার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছেন। সবাই বলেছেন, তারা আদর-যত্নে নবজাতককে বড় করবেন। কোনো দিন অভাব তাকে স্পর্শ করবে না। কিন্তু শিশুটিকে এখনই দত্তক দেয়া ঠিক হবে না।

‘শিশুটির ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। সে সম্পূর্ণ সুস্থ হোক। এরপর তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।’

নবজাতক ওই দুর্ঘটনায় মা-বাবা-বোনকে হারালেও বাড়িতে আছে তার আরও দুই ভাই-বোন ৮ বছরের এবাদত ও ১০ বছরের জান্নাত। এতিম শিশুদের দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে তাদের বৃদ্ধ দাদা-দাদির ওপর। তিন শিশুকে নিয়ে যেন অথৈ সাগরে পড়েছেন তারা।

নিহত জাহাঙ্গীরে বাবা ও শিশুদের দাদা মুস্তাফিজুর রহমান বাবলু নিউজবাংলাকে জানান, জাহাঙ্গীর আকিজ গ্রুপের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করতেন। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য।

বাবলু ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী রত্না এবং ছোট মেয়েটা মারা গেল। এখনও তাদের পরিবারে দুই শিশু সন্তান আছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নবজাতক শিশুকন্যা। নবজাতকের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে সবাই এগিয়ে আসলেও এতিম হওয়া বাকি দুই শিশুদের খোঁজখবর কেউ নিচ্ছে না।’

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সংসার কীভাবে চালাবো? ওই দুই সন্তানের মুখে তিন বেলা আহার যোগানোর সক্ষমতাও আমার নেই। সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি।’

শিশুদের দাদি সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার দুটো মাত্র ছেলে ছিল। ২০০৪ সালে বাড়ির সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যায় ছোট ছেলে শামসুল হক। এখন বড় ছেলে জাহাঙ্গীর পুত্রবধূ রত্না আর নাতনি সানজিদার জীবন কেড়ে নিল ট্রাক।

‘এখন বেঁচে থাকা নবজাতকের জন্য সবাই অর্থ সহায়তা দিলেও এতিম অন্য দুই নাতি-নাতনির লালনপালন ও পড়াশোনা করাবো কীভাবে সে চিন্তাই করছি।’

জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই মো. শরীফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবাদত ও জান্নাত প্রায়ই তাদের বাবা-মায়ের কবরের পাশে গিয়ে কান্নাকাটি করে। তাদেরকে বিভিন্নভাবে সান্তনা দেয়া হচ্ছে। বাবা-মাকে ভোলাতে তাদের নবজাতক বোনকে দেখাতে হাসপাতালেও নিয়ে যাই।

‘ফুটফুটে নবজাতককে কোলে নিয়ে খুশি হয়েছে অবুঝ শিশুদুটি। তাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা তাদের পাশে দাঁড়ালে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে।’

এ বিভাগের আরো খবর