জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণকাজ নিয়ে উপাচার্যের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগে পদহারা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএস গোলাম রাব্বানী রাজনীতিকদের আয়ের স্বচ্ছতার ওপর জোর দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের আড্ডাবাজিতে সময় ব্যয় না করে আয়ের স্বচ্ছ পথ খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন।
দেশের অন্যতম শিল্প গোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের হেড অফ করপোরেট হিসেবে যোগ দিয়ে আলোচনায় এসেছেন রাব্বানী। চাকরিতে যোগ দেয়ার পর নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
আপনি কি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন? এমন প্রশ্নে রাব্বানী বলেন, তিনি রাজনীতি ছাড়েননি। বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতির জন্যই চাকরি করছেন। বলেন, ‘প্রতিটি রাজনীতিবিদের আয়ের একটা স্বচ্ছ উৎস থাকা উচিত।’
চলতি মাসের শুরুতে তিনি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি অর্ধেক বেতনও পেয়ে গেছেন। বেতনের একটি অংশ তিনি মানবসেবা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য ব্যয় করবেন বলে জানান।
ছাত্রলীগের পদহারা নেতা বলেন, ‘আমার প্রথম পরিচয় আমি রাজনীতি করি। আমার কাছে রাজনীতি মানে ভালো কাজ বা জনসেবা করা। কিন্তু এই ভালো কাজ করার জন্য বা ইনকামের জন্য তো একটা অর্থনৈতিক সাপোর্ট দরকার।
‘ধান্ধাবাজি আমি পছন্দ করি না, করতেও পারি না। এ জন্য আমি এখানে জয়েন করেছি। এখান থেকে আমি আর্থিক যে সাপোর্টটা পাব, তার একটি অংশ আমি দেশের মানুষের জন্য এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ব্যয় করব।’
২০১৮ সালের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর তাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সেদিন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
পদে থাকার সময় ছাত্রলীগের এই দুজন নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। তবে তাদের সরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবির অভিযোগকে।
২০১৯ সালে শোভন ও রাব্বানীর বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ থেকে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ তোলেন প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
আয়ের স্বচ্ছতার বিষয়ে রাব্বানী উদাহরণ টানেন পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাকরি করার বিষয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন একটা বিমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং আয়ের একটা স্বচ্ছ উৎসের জন্য আমিও চাকরি করছি।
‘কাদের ভাই (ওবায়দুল কাদের), নানক ভাই (জাহাঙ্গীর কবির নানক) সহ আওয়ামী লীগের প্রায় সিনিয়র নেতারা কিন্তু চাকরি বা ব্যবসা করে এসেছেন। সুতরাং চাকরির কারণে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার সুযোগ নেই।’
চাকরিতে যোগ দিয়েই রাজনীতিকদের আয়ের উৎস প্রকাশের দাবিও জানিয়ে রাখলেন রাব্বানী। বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো তো কাউকে বেতন দেয় না। তাহলে দলগুলোর বড় বড় নেতার গাড়ি, বাড়ি, জীবনযাপন কীভাবে চলে? কোত্থেকে আসে? সোর্স কী? সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের নৈতিক দায়িত্ব তাদের আয়ের উৎস কী সেটা প্রকাশ করা। যারা ফুলটাইম পলিটিশিয়ান তাদের ইনকামের সোর্স কী সেটা সবার জানতে হবে।’
রাজনীতিতে জড়িতদের আড্ডাবাজিতে মশগুল না থাকার পরামর্শও দেন ছাত্রলীগের পদহারা এই নেতা। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে তো আয় করার সুযোগ নেই। মধুর ক্যানটিন বা পার্টি অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা তো রাজনীতি না। এটা দিয়ে তো দেশের কোনো উপকার হবে না। এখন রাজনীতি সঠিক ট্র্যাকে নেই। রাজনৈতিক প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে হবে।’
চাকরি ও রাজনীতির কাজ কীভাবে সমন্বয় করবেন- এমন প্রশ্নও ছিল রাব্বানীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘যমুনা গ্রুপ আমার কাজের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। সুতরাং এটির পাশাপাশি আমি আমার রাজনৈতিক এবং সামাজিক কাজকর্ম কন্টিনিউ করতে পারব। হয়তো আমার একটু পরিশ্রম বেশি হবে। এটি নিয়ে তাদের কোনো রেস্ট্রিকশন নেই। তারা এটিকে স্বাগত জানিয়েছে। যমুনা গ্রুপের সাথে টিম পজিটিভ বাংলাদেশ একসাথে কাজ করবে।’
হেড অফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হিসেবে যমুনা গ্রুপে কী দায়িত্ব- এমন প্রশ্নে রাব্বানী বলেন, ‘যমুনা গ্রুপের ৪১টা কনসার্ন আছে। আমার কাজ হচ্ছে, এগুলোর সম্পূর্ণ দেখভাল করা। ইতোমধ্যে আমি কিছু কাজও করেছি। যেমন, গ্রুপের ওয়েবসাইট নতুন করে ডিজাইন করা, সিকিউরিটি বাড়ানো এবং কর্মীদের পে-স্কেল বাড়ানো।’