বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শ্রীলঙ্কা সংকট পাকিস্তান বাংলাদেশের জন্য সতর্কতা: আইএমএফ

  •    
  • ১৮ জুলাই, ২০২২ ১৬:২৩

পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও লাউসসহ আরও কয়েকটি দেশে শ্রীলঙ্কার পরিণতি আসতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে আইএমএফ। বিশ্ব সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিসটালিনা জর্জিবা জানিয়েছেন, অতিমাত্রায় ঋণের বোঝা, সীমিত সম্পদ ও নীতিমালা থাকার কারণে বেশ কিছু দেশ ভয়াবহ সমস্যার পড়ে যেতে পারে। বেশি দূর নয়, সতর্কতামূলক শ্রীলঙ্কার দিকে নজর দিলেই হবে।

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কা এশিয়া তথা দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের জন্য সর্তক বার্তা বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান।

বিশ্ব সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিসটালিনা জর্জিবা শনিবার জানিয়েছেন, অতিমাত্রায় ঋণের বোঝা, সীমিত সম্পদ ও নীতিমালা থাকার কারণে বেশ কিছু দেশ ভয়াবহ সমস্যার পড়ে যেতে পারে। বেশি দূর নয়, সতর্কতামূলক শ্রীলঙ্কার দিকে নজর দিলেই হবে।

আইএমএফ প্রধানের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো ব্যাপক মাত্রায় অর্থ পাচার ও অতি মুনাফার আশায় উন্নত দেশে মূলধন বিনিয়োগের মতো সংকটে জর্জরিত হতে পারে। এতে করে সংকট মোকাবিলায় এসব দেশের সরকারের নেয়া নীতিমালা বড় ধরনের হোচট খেতে পারে।

খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির দাম পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কা।

দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি ছাড়িয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। সেই সঙ্গে পণ্যমূল্য এক বছরে বেড়েছে ৮০ শতাংশ। চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে দ্বীপরাষ্ট্রটির মুদ্রা রুপির ব্যাপক দরপতন হয়েছে।

গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ ঋণের চাপে পড়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে গত দুই দশকে শ্রীলঙ্কা প্রথমবারের মতো বৈদেশিক ঋণের বোঝায় দেউলিয়া ও খেলাপি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

এমন অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য দেশটির সরকার আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৩ বিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার পরিমাণ বেল আউট চেয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অচলাবস্থার কারণে তা আটকে গেছে।

সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে এমন অস্থিরতার মধ্যে লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি ও ঊর্ধ্বমুখী সুদের হার, মুদ্রার দরপতন, উচ্চমাত্রায় ঋণের বোঝা ও রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে এশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে আইএমএফ।

চীন এ অঞ্চলে বিভিন্ন দেশকে বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তা দিয়েছে। সেই সঙ্গে বলা চলে, এসব দেশের অর্থব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যৎ নির্ধারণে পরোক্ষ প্রভাব ও ভূমিকাও রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে চীনের ঋণ সহায়তা দেয়ার শর্ত এখনও স্পষ্ট নয় এবং তারা কীভাবে খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা করে তাও স্পষ্ট করে না।

এ অবস্থায় পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও লাওসসহ আরও কয়েকটি দেশে শ্রীলঙ্কার পরিণতি আসতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে আইএমএফ।

লাওস

পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস কয়েক মাস ধরে ঋণখেলাপি হওয়ার শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ৭৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে চরম জ্বালানির সংকট ও লাগামহীন মূল্যের পাশাপাশি এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে দারিদ্র্যসীমায় নামিয়ে দিয়েছে।

ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা কিপের দরপতন হয়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি।

পাকিস্তান

পাকিস্তানে মে মাসের শেষ দিকে সরকারের দেয়া ভর্তুকি তুলে নেয়ার পর জ্বালানির দাম ৯০ শতাংশের বেশি ছাড়িয়েছে। ব্যয় সংকোচনের নীতি নেয়ার পাশাপাশি দেশটি আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বেল আউট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামকে সামাল দিতে মরিয়া দেশটির সরকার। জুন মাসে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড করা হয়েছে ২১.৩ শতাংশ যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বড় শিল্পগুলোর ওপর ১০ শতাংশ কর চাপিয়েছে সরকার। আইএমএফের অন্যতম শর্ত হিসেবে সরকারের রাজস্ব ও ব্যয়ের মধ্যকার ব্যবধান কমিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

শ্রীলঙ্কা ও লাওসের মতো পাকিস্তানের বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমতে শুরু করেছে। গত বছর আগস্টের তুলনায় তা নেমে হয়েছে অর্ধেকে।

মালদ্বীপ

দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে জনগণের মাথাপিছু ঋণ বেড়ে ১০০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

শ্রীলঙ্কার মতো করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত এই দেশটির অর্থনীতি অনেকাংশে পর্যটনশিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোতে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায়। দেশটিতে জ্বালানির দাম আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে কারণ এর অর্থনীতি বহুমুখী নয়।

বাংলাদেশ

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি মে মাসে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

রিজার্ভের পরিমাণ কমতে থাকায় এরই মধ্যে সরকার অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ করার নীতি অনুমোদন দিয়েছে। প্রবাসীদের আয় (রেমিট্যান্স) দেশে পাঠানোকে উৎসাহিত করতে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা আরও সহজ করেছে সরকার। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ কমিয়ে আনা হয়েছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক কিম ইং তান বিবিসিকে জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক সংকটে থাকা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সরকার নিত্যপণ্য ও স্বাস্থ্যসেবায় ভর্তুকি চালিয়ে যেতে চরম হিমশিম খাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে ব্যয়ের তালিকা গুরুত্বের ভিত্তিতে আবারও সাজাতে হবে। এবং ভোক্তার আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে কঠোর নীতিমালাও আরোপ করেছে সরকার।’

খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী দাম মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বের অর্থনীতিতে ফের চাপ সৃষ্টি করেছে।

বিশ্ববাজারে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সামাল দিতে উন্নয়নশীল দেশগুলো ব্যাপকহারে বিশ্বসংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেয়া অব্যাহত রেখেছে।

সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল

এদিকে, বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও খেলাপি ঋণের উচ্চহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত প্রতিনিধি দল।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে আইএমএফ। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সুশাসনের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের পাঁচ সদস্যের স্টাফ মিশন গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন। এর আগে গত মার্চে তারা প্রথম এসেছিলেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, সরকার খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও তা কমেনি। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। এর কারণ জানতে চায় আইএমএফ।

জবাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এই চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।

বিপরীত মত

বৈদেশিক ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন দেশের তালিকা প্রকাশ সম্প্রতি করেছে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট। এই তালিকায় স্থান পাওয়া ২৫টি দেশের র‍্যাঙ্কিং করতে তারা ব্লুমবার্গের ডেটা ব্যবহার করেছে।

তবে এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। বাংলাদেশ ঋণখেলাপি হতে পারে, এমনটা ভাবছে না কানাডাভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে তালিকায় নাম রয়েছে পাকিস্তানের।

সরকারি বন্ড, ৫ বছরের ডিফল্ট ক্রেডিট অদল-বদল, জিডিপিতে সুদের ব্যয়ের হার, জিডিপিতে সরকারি ঋণের হারের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা করা হয়েছে।

২০২২ সালের মে মাসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ঋণখেলাপি হয়ে যায়। দেশটির সরকারকে ৭৮ মিলিয়ন ডলারের সুদ পরিশোধের জন্য ৩০ দিন বাড়তি সময় দেয়া হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত দেশটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়।

এ বিভাগের আরো খবর