নড়াইলসহ দেশের যেসব জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে সেগুলোর পেছনে রাষ্ট্রীয় মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বামপন্থী ৮ ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন। তারা এসব সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ৮টি ছাত্র সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশের আগে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক হয়ে শাহবাগ ঘুরে রাজু স্মারক ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
সমাবেশের আয়োজক আট ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ছয়টির নাম জানা গেছে। সেগুলো হলো- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।
অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক তামজীদ হায়দার।
রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘নড়াইলে পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়েছে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, যারা রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রশাসনে আসীন, তারা কীভাবে এ ঘটনাগুলো ঘটতে দিচ্ছে? তারা কোনো ভূমিকা পালন করছে না কেন? এটি স্পষ্ট যে তারা হামলাকারীদের মদদ দিচ্ছে৷
‘সাম্প্রদায়িক মনন এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি জারি থাকলে শাসক গোষ্ঠীর সুবিধা৷ করোনায় দেশের মানুষ চিকিৎসা পায়নি, বাজারে আগুন জ্বলছে, বেকার সমস্যা বাড়ছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে৷ সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে আনা গেলে সেসব আড়াল হয়ে যাবে। এই রাজনীতিই এখন চলছে৷’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি মশিউর রহমান খান বলেন, ‘দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ চরিতার্থ করতে বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ শাসক দলের সরাসরি ছায়া ও প্রশাসনের দর্শক হয়ে থাকার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে৷ এই সরকারের আমলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা ধর্মপ্রাণ মানুষকে উগ্র প্রমাণ করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়৷’
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বলেন, ‘এর আগে যে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো হয়েছে সেগুলোর একটিরও বিচার হয়নি৷ নড়াইলের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই৷ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ আগের ঘটনাগুলোর বিচার করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে৷’
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সহ-সভাপতি ছায়েদুল হক বলেন, ‘পাহাড়-সমতল সবখানে ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন জারি আছে৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে৷ যার ক্ষমতা কম, সবচেয়ে গরিব মানুষেরা আক্রমণের শিকার হচ্ছে৷ একের পর এক ঘটনা ঘটছে৷ অথচ একটিরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার হয়নি৷ বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এসব ঘটে চলেছে৷’
বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পদক শোহবোত শোভন বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্রমাগত পাহাড়ে জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনসহ ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির মাধ্যমে ভোট বাগিয়ে নিতে ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। এর পেছনে দায়ী এই রাষ্ট্র ও তার বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন। এটিকে হটিয়ে জণগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে যেতে হবে।’
ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দীপা মল্লিক বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বাহানায় দেশে বিভিন্ন ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো এখানে চুপ করে থাকায় দায়টা তাদের ওপর বর্তাচ্ছে৷ মুসলিম সম্প্রদায় চুপ কেন- এই প্রশ্নের মীমাংসা করতে হবে৷
‘জনগণকে বিভক্ত করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায়৷ এই হামলা খোদ রাষ্ট্রীয় মদদে হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এগুলো ঘটছে।’