রাজধানীতে সরবরাহ করা পানির দাম যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করতে বলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, কোনো প্রতিষ্ঠান ভর্তুকি দিয়ে টিকতে পারে না। সেই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসাকে এটাও কমে করিয়ে দিয়েছেন যে, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে পানির দাম বাড়ানো চলবে না। দুর্নীতি কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।
রোববার রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসার একটি অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন মন্ত্রী। এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ বিষয়ক টেকনিক্যাল স্টাডির (কারিগরি গবেষণা) ফলাফল উপস্থাপন করা হয় এতে।
গবেষণা প্রতিবেদনে রাজধানীবাসীর আর্থিক সক্ষমতার বিবেচনায় পানির দাম ভিন্ন রাখার প্রস্তাব করা হয়। নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে উৎপাদন ব্যয়ের অর্ধেক মূল্যে, মধ্যবিত্তকে উৎপাদন ব্যয়ের সমান আর উচ্চবিত্তর কাছ থেকে উৎপাদন ব্যয়ের দেড় গুণ দাম আদায়ের প্রস্তাব করা হয় এতে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা ওয়াসার প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা। এই পানি সরবরাহ করা হয় ১৫ টাকা ১৮ পয়সায়।
গ্রাহককে আর্থিক শ্রেণি অনুযায়ী ভাগ করে একেক শ্রেণির জন্য একেক হারে পানির দাম ঠিক করতে চায় ঢাকা ওয়াসা।
সবার কাছ থেকে সমান হারে মূল্য রাখার বদলে উচ্চবিত্তের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা।
উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের পানির দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩১ টাকা ২৫ পয়সা।
উৎপাদন মূল্যে পানি পাবে মধ্যবিত্ত ও সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা।
নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য দাম ঠিক করা হচ্ছে ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। আর নিম্নআয়ের মানুষ একই পরিমাণ পানির জন্য বিল দেবেন ১২ টাকা ৫০ পয়সা।
বাণিজ্যিক গ্রাহকদের কাছ থেকে এক হাজার লিটার পানির বিল ৫০ টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে যা বর্তমানে ৪২ টাকা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা ওয়াসার মোট গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির, ১১ শতাংশ বাণিজ্যিক, ৪ শতাংশ মধ্যবিত্ত।
উচ্চবিত্ত গ্রাহকের সংখ্যা মোট গ্রাহকের ০.৮০ শতাংশ। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও উচ্চ মধ্যবিত্ত আছে বাকি ৪ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী তাজুল নিজেও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেন। তিনি বলেন, ‘পানির দাম অবশ্যই যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। মানুষের জন্য যেন কষ্টকর না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার কম মূল্যে পানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান যাতে অকার্যকর না হয় সে দিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
‘ভুর্তকি দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। পানির দাম কত হবে তা ওয়াসার বোর্ড সভার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। অযৌক্তিকভাবে পানির দাম যেমন বাড়ানো উচিত নয়, তেমনি যৌক্তিক মূল্য প্রদানে অসহযোগিতা করার সুযোগ নেই। উৎপাদন খরচ কোনোভাবেই বিক্রয় মূল্যের চেয়ে কম হতে পারে না।’
কেবল দাম বাড়াটাই শেষ কথা নয়, সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী। বলেন, ‘শুধু দাম বাড়লেই প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে না, যদি সেখানে অব্যবস্থাপনা থাকে। অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতির কারণে পানির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। দুর্নীতিকে কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।
‘সকল প্রতিষ্ঠান কাজ করার জন্য একদিকে যেমন সুযোগ দিতে হবে তেমনি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল হতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিককে দ্রুত সেবা দেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। দিনের পর দিন সেবাগ্রহীতাকে কোনোভাবেই হয়রানি করা যাবে না।’
এলাকাভিত্তিক বা গ্রাহকের আর্থিক শ্রেণি অনুযায়ী পানির আলাদা দামের প্রস্তাবও সায় দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অভিজাত এলাকায় বসবাসরত মানুষকে যে মূল্যে পানি দেয়া হয়, বস্তিবাসী বা নিম্নবিত্তদের তার থেকে কম মূ্ল্য পানি সরবরাহ করা উচিত।
‘গরিব মানুষের কাছ থেকে রাজস্ব নিয়ে ধনীদের কম দামে পানি দেয়ার সুযোগ নেই। এজন্য জোনভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।’
পানির পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য ইউটিলিটিক্যাল সার্ভিসের মূল্য নির্ধারণ হওয়া উচিত বলেও মনে করেন মন্ত্রী। সেই সঙ্গে রাজধানী থেকে জনবসতি আশেপাশের এলাকায় সরিয়ে নেয়ার কথা বলেন।
তাজুল বলেন, ‘বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের মূল শহরে বেশি মানুষ বসবাস করে না। কারণ, এখানে বসবাস করা অনেক ব্যয়বহুল। তাই ব্যয় সংকোচনের জন্য পার্শ্ববর্তী শহরে বসবাস করে। সকালে ট্রেনে করে মানুষ শহবে এসে অফিস করে বিকেলে চলে যায়। আমরাও যদি আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে পারি তাহলে ঢাকার মানুষকে আশপাশের শহরে রিলোকেট করা সম্ভব হবে।’
মফস্বল ও গ্রামের উন্নয়নেও জোর দেন মন্ত্রী। বলেন, ‘সবাই ঢাকায় থাকতে চায়। দেশের সব মানুষকে ঢাকায় রাখা যাবে না। আবার ঢাকা থেকে মানুষকে জোর করে বের করে দেয়াও যাবে না। শহরমুখী মানুষের চাপ কমাতে গ্রামগুলোকে উন্নত করতে হবে।
‘আধুনিক নাগরিক সেবা গ্রামে পৌঁছে দিতে সরকার আমার গ্রাম আমার শহর দর্শন বাস্তবায়ন করছে। শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। গ্রামে বসে শহরের আধুনিক সব নাগরিক সেবা পেলে মানুষ শহরে আসবে না।